সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার ২০২ কোটি টাকা
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার গত সপ্তাহ দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ার দর উত্থান তুলনায় পতন ৫ দশমিক ৫৯ গুন বেশি। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা কমেছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা।
এদিকে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে এক হাজার ১৫১টির। এছাড়া ১৯৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৭ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ১১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি ৪ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বাড়ে।
প্রধান ও বাছাই করা ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের মতো গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
সবশেষ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে এক হাজার ১৩২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪০ কোটি ৩১ লাখ ৪ হাজার টাকা। ১০৩ কোটি ৫৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনালী পেপার, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, জেনিমি সি ফুড, ওরিয়ন ইনফিউশন এবং আমরা নেটওয়ার্ক।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, শেয়ারবাজার কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গত সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এছাড়া বি ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৪৩ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। একাই মোট শেয়ারের ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ লেনদেন করেছে।