বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদনশীলতা ভারতের অর্ধেক আঙ্গিনার জমি ও পানিতে ভাসমান আনাজ চাষে এগিয়েছে দেশ
বিশ্বজিৎ দত্ত : বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি পেয়াঁজের উৎপাদনশীলতা ভারত বা তুরস্কের তুলনায় অর্ধেক। ভারতে প্রতি হেক্টরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৮ টন। সেখানে বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের উৎপাদন ৮ টন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মশলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নূর আলম চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের জলবায়ু পেঁয়াজ চাষের উপযুক্ত। কিন্তু উন্নততর বীজ ও চাষাবাদের অভাবে এখানে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়। বর্তমানে মশলা গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৬টি উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভাল উৎপাদন হয় বারি ৬ জাতের পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজের উৎপাদন সময় ১১০ দিন। যা বিশ্বের উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের উৎপাদন সময়ের সমান। তিনি মনে করেন, আমাদের খাদ্যাভাসের উপযুক্ত পেঁয়াজ উৎপাদনে কম হয়। খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা গেলে আরো উন্নত প্রজাতির পেঁয়াজ উৎপাদন করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে ১.৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। এরমধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় প্রায় ১৮ লাখ টন। যা দেশের মোট চাহিদার ৫৭ শতাংশ। বাকি পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ২০২১ সালে দেশে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের সরকারি বাসস্থান গণভবনে পেঁয়াজসহ নানা ধরনের আনাজ চাষবাদ করেছেন। সম্প্রতি তিনি আবেদন জানিয়েছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে।
কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, নিজের আঙ্গিনায় সবজি ও আনাজ চাষের জন্য ৪৩১ কোটি টাকার পুষ্টি বাগান প্রকল্প গ্রহণ করেছে তারা। দেশের অনাবাদি ৪ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় এসছে ১৪ হাজার হেক্টর জমি। তবে বসত বাড়িতে মোট পতিত জমির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ হেক্টর। সারাদেশের বাসতবাড়ির পতিত জমি এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন, প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহম্মদ আকরাম হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, প্রকল্পটির ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বসত বাড়িতে ১ লাখ বাগান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বাগানে এখন ৩৩৮ কেজি সবজি উৎপাদন হচ্ছে। যা বাজার মূল্যে ৯ হাজার ৪৫০ টাকা। আর উৎপাদনে খরচ হবে ৫০০ হাজার টাকা। তিনি জানান, এই হিসাবে কৃষকের পরিশ্রমিক ধরা হয়নি।
একইভাবে জলাভূমিতে আনাজ ও সবজি চাষের আরো একটি প্রকল্প নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্প পরিচালক ড. বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, জমি ছাড়া কোনধরনের কীট নাশক, সেচ ছাড়া , রাসায়নিক ছাড়া ভাসমান সবজি চাষ চলছে। সারাদেশে ৪৬টি উপজেলায় ভাসমান সবজি চাষের প্রকল্প চলছে। এই চাষে কৃষদের পরামর্শ দিয়ে, পানিতে নামার মতো উপকরণ ও কিছুটা আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ভাসমান সবজি চাষ করা হচ্ছে। একটি ভাসমান বাগানে কৃষক যদি ১০ হাজার টাকা খরচ করে তবে সে ২৭ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবে। এটি আমরা কয়েকটি ভাসমান বাগানের উৎপাদনের হিসাব থেকে ধারণা পেয়েছি।