মতিনুজ্জামান মিটু : বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনা আজও সর্বস্তরে বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলো তাদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত। বায়ান্নর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর মাতৃভাষা রক্ষা ও সংরক্ষণের কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পিসিপি নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ হতে হলে মাতৃভাষায় শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনও সরকার এদেশের সংখ্যালঘুদের ভাষা রক্ষা ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেনা। এক্ষেত্রে দেশের শাসকগোষ্ঠির আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। এহেন বিমাতাসুলভ ভূমিকার কারণে বাংলা ব্যতিত অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষা ও বর্ণমালা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সব সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভাষা শহীদদের মর্যাদা রক্ষায় অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০ ভাষা-ভাষী ১৫টি জাতিসত্তাসহ সারাদেশের ৪৫টির বেশি সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসত্তাগুলোর ভাষা-সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৭ সালে ৫টি ভাষায় (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরি) প্রাক-প্রাথমিকে মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি চালু করেছিল। কিন্তু শুধু মাত্র ৫টি ভাষা চালু করলে হবে না, সব জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ ও যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিতসহ পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি দ্রæত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি তিনি জোর দাবি জানান। অমল ত্রিপুরা বলেন, ১৯৫২ সালে ছাত্রদের প্রধান দাবি ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সেদাবি নিয়ে তৎকালীন ছাত্র সমাজ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং আজকের এই দিনে সালাম, বরকত, রফিক, শফিকসহ অনেকে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা এবং তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমা ও ঢাকা শাখার সহ-সভাপতি রূপসী চাকমা ও সহ-সাধারণ সম্পাদক তীর্থ ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিটেন চাকমা প্রমুখ। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে স্যালুট দেওয়া হয়।