তানভীর সরকার : কেউ হাত তুলে মোনাজাত করছেন, কেউ বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন, কেউ বা বাবা-মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করছেন। কেউ কেউ চোখের পানি ঢাকতে নিজেকে আড়াল করছেন সবার থেকে। সেই সঙ্গে হ্যান্ড মাইকে দেওয়া একের পর এক নির্দেশনা পালন করছেন ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণী। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত বৃহস্পতিবার পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে এমন আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
নিয়োগ প্রত্যাশী ও অভিভাবকদের সামনে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক এ ফলাফল ঘোষণা করেন। একে একে প্রাথমিকভাবে ট্রেইনি কনস্টেবল পদের জন্য নির্বাচিত ৪৮ জন ছেলে ও আটজন মেয়ের নাম ঘোষণা করেন তিনি। ঘুষ, সুপারিশ ও হয়রানি ছাড়া মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশে চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লæত হয়ে পড়েন তারা।
নতুন চাকরি পাওয়া মোহাম্মদ হাসান শৈকত বলেন, শুনেছি সরকারি চাকরির জন্য অনেক টাকা পয়সা লাগে। অনলাইনে ১২০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেছিলাম, আর কোনো টাকা লাগেনি। কাউকে দিয়ে সুপারিশও করাতে হয়নি।
সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া চিতলমারী উপজেলা সদরের বাসিন্দা জুঁই আক্তার বলেন, ভালো লেখাপড়া করলে যে চাকরি পাওয়া যায়, তার প্রমাণ পেলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, অনেক স্বচ্ছভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে চললে মেধাবীরা আসতে পারবে সরকারি চাকরিতে। অন্যদিকে চাকরি ক্ষেত্রে কোটা বাদ দেওয়ার কথা জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন চাকরি পাওয়া এক তরুণ। তিনি বলেন, কঠিন প্রতিযোগিতাপূর্ণ নানা ধাপ ও পরীক্ষায় পাস করে আমরা মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত পৌঁছাই। কিন্তু পোষ্য কোটা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটা, আনছার ভিডিবি কোটাসহ নানা কারণে অনেক কম মেধাবীর চাকরি হয়ে যাচ্ছে। আর বাদ পড়ছে আসল মেধাবীরা। এখনই সব চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা প্রয়োজন। না হলে চাকরিজীবীর সন্তান চাকরিজীবী হব, আর কৃষকের মেধাবী ছেলে-মেয়ে বেকার থাকবে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, আমরা খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। কোনো অসাধুপায় অবলম্বনের সুযোগ দেওয়া হয়নি কাউকে। কোনো রাজনৈতিক সুপারিশ বা চাপও ছিল না। মেধাবী এবং শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের আমরা চাকরি দিয়েছি। আশা করি, নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা পুলিশ বিভাগ ও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে।
এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় বাগেরহাট জেলার ৫৬টি পদের বিপরীতে এসএসসি পাস চার হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। বয়স, ফলাফল ও সঠিকভাবে আবেদন না করায় দুই হাজারের বেশি আবেদন বাতিল হয়ে যায়। বাকি এক হাজার ৯৩৫ শারীরিক মাপ ও শারীরিক কসরতের সুযোগ পান। তাদের মধ্যে ৫৩৫ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন ১২১ জন। তাদের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫৬ জনকে চ‚ড়ান্তভাবে ট্রেইনি কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সূত্র : বাংলানিউজ২৪