ডাক্তার এস এ মালেকের স্মরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে
আমিনুল ইসলাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে গেলেও তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছি। একদিন এই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। এজন্য আমরা প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ একদিন উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবেই গড়ে উঠবে। মালেক ভাই যদি বেঁচে থাকতেন হয়তো আরো বেশি দেখে যেতে পারতেন। তবে, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এ পর্যন্ত তিনি জেনে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার তাঁর সাবেক রাজনৈতিক উপদো ডাক্তার এস এ মালেক স্মরণে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভাষণে এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কলাবাগান অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর এক দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ড. এস এ মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে কয়জন অবদান রেখে গেছেন তারমধ্যে ডা. এস এ মালেক একজন। অত্যন্ত বৈরি পরিবেশের মধ্যেও তিনি জাতির পিতার আদর্শকে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও নেতা-কর্মীদের শিক্ষা দেয়া এবং তাদের জানানোর বিষয়টি তিনি অনেক দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন।
ডাক্তার মালেক রাজনৈতিক নেতা হলেও তার মধ্যে কোন ধরনের অহমিকা ছিলনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এই উপদেষ্টা খুব সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন এবং যা অর্থ পেতেন তাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতেন। একজন এম.বি.বি.এস চিকিৎসক হয়েও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন বলে তাঁর রোগ নির্নয় এবং নিরাময় অত্যন্ত কার্যকর ছিল। এক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও তাঁর হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর লেখনির হাত ভাল ছিল। সেই লেখনির মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শকে তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যত বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও তিনি লিখে গেছেন। আমি মনে করি সেগুলো আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ হিসেবে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচার, মানুষের মাঝে জনমত সৃষ্টি,লেখালেখি এবং সংগঠন করার ক্ষেত্রে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা ভাবেননি। কিন্তু, ১৯৮১ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে দল আমার অনুপস্থিতিতে সভাপতি করায় আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, ড. মালেক ও মোহাম্মদ হানিফ তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কারণ তারা জনমত তৈরি করেছেন এবং দলীয় ফোরামে নিয়ে গেছেন। এমনকি তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার জন্য বারবার জোর দেয়ার জন্য ডা. এস এ মালেককে তিরস্কার করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
আলোচনা সভায় সিনিয়র সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার ডা.এস এ মালেক ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ- আলোয় আঁকা সাহসী মানুষের প্রতিকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আখতারুজ্জামান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.আব্দুল খালেক এবং ডা: এস এ মালেকের ছেলে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন।
মুক্তিযুদ্ধে ড. মালেকের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডা. মালেক ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে রাজবাড়ী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর যুদ্ধক্ষেত্র কুয়িায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এয়ার রেইড চলার সময়ও তিনি বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ’৭৫ এ জতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে র্রাপতি ঘোষণা করে অনেক সংসদ সদস্যকে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। ডা. মালেক সেখানে যাননি এবং অনেককে সেখানে যোগদান থেকে বিরত রাখেন। পাশাপাশি দেশের মধ্যে খুনীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চো করেন। ফলে এক সময় ভারতে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়।