৮০ শতাংশ কোম্পানিই বীমা দাবি পরিশোধ করছে না : আইডিআরএ চেয়ারম্যান
আমিনুল ইসলাম : হাতেগনা ৫টি বীমা কোম্পানিকে বাধ দিলে ৮০ শতাংশ কোম্পানিই গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ করছেন। এজন্য দায়িত্ব নেয়ার পর সংশ্লি কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা করেছি, বৈঠক করেছি কিন্তু কাংঙ্খিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য সুনির্দি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আইডিআরএ। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি কোম্পানির সাথে বৈঠক করে বলেছি, সম্পত্তি বিক্রি করে বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। গতকাল সোমবার জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী। সংবাদ তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে ১ মার্চ বুধবার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন করা হবে। এ বছরের বীমা দিবসের প্রতিপাদ্য “আমার জীবন আমার সম্পদ, বীমা করলে থাকবে নিরাপদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সময়ে সর্বস্তরের জনগণকে সংগঠিত করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে এ অঞ্চলের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তারিখটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সরকার ১ মার্চ কে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা এখন ৮১টি। এর মধ্যে লাইফ বীমা কোম্পানি আছে ৩৫ টি। আর নন-লাইফ বীমা ৪৬টি। গত কয়েক বছরে নানামুখী সঙ্কটের মাঝেও জীবন বীমার তহবিল ও সাধারণ বীমার সম্পদ দুটোই বেড়েছে। এমনকি ২০২১ সালে করোনা মহামারির সঙ্কটের মাঝে বিশ্বব্যাপী মোট বীমা প্রিমিয়ামের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি যেখানে ৩ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছিল, সেখানে বাংলাদেশে বীমা প্রিমিয়ামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ভাগ, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ০৪ ভাগ।
তিনি বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৬,৮১২.৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে লাইফ বীমার গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১১,৩৯৯.৫১ কোটি টাকা। আর নন লাইফে এই পরিমান ৫,৪১৩,১৪ কোটি টাকা। যা সংকটের এই সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় তারল্যের যোগান দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির অর্জিত প্রিমিয়ামের ওপর ২০২২ সালে ১৩০৫.৭৩ কোটি টাকার ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। বিগত বছরে লাইফ ৩০,২৮,৯৩০ টাকা এবং নন-লাইফ ৩৩,৫৩৮ টি বীমা কোম্পানিসমূহে উত্থাপিত বীমা দাবির মোট সংখ্যা ৩০,৬২,৪৬৮ (ত্রিশ লক্ষ বাষট্টি হাজার চারশত আটষটি) টি, তন্মধ্যে লাইফ (১৮,৯২.৯৯২ টি) এবং নন-লাইফ (১৯, ৮৭৭ টি) বীমা কোম্পানি সর্বমোট ১৯,১২,৮৬৯ টি (উনিশ লক্ষ বারো হাজার আটশত ঊনষত্তরটি) বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিগত বছরে বীমা দাবি অনাদায়ীর পরিমাণ লাইফ (৪৫৬৭.১২ কোটি টাকা) এবং নন-লাইফ (১৯৯২,৬৯ কোটি টাকা) খাতে মোট ৬৫৫৯.৮১ (ছয় হাজার পাঁচশত উনষাট দশমিক আট এক) কোটি টাকা। একই সঙ্গে এই সময়ে দেশের অর্থনীতিতেও এই খাতের অবদান বেড়েছে। দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ বীমা সাথে সম্পৃক্ত এবং কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। আর এই সাফল্যে বড় অবদান রেখেছে, এ খাতের নতুন নতুন সব জনবান্ধব ও কল্যাণমুখী বীমা। বীমা খাতে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্দেশ্যে সরকারের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বীমা শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আইডিআরএ সুনির্দি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।