• প্রচ্ছদ
  • আমার দেশ
  • আমাদের বিশ্ব
  • খেলা
  • ইসলামি চিন্তা
  • অমৃত কথা
  • বিনোদন
  • আজকের পএিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • নগর সংস্করণ
  • মিনি কলাম
  • খ্রিস্টীয় দর্পণ
  • প্রবারণা পূর্ণিমা

মিনি কলাম

গণভবনের কৃষি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শাইখ সিরাজ

প্রকাশের সময় : February 27, 2023, 11:13 pm

আপডেট সময় : February 27, 2023 at 11:13 pm

মাহবুব মোর্শেদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে ঘুরে এসে গণভবনে যে সংবাদ সম্মেলনগুলো করেন সেগুলোর কোনো একটিতে শাইখ সিরাজের প্রতি তার আলাদা মনোযোগ দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম। অন্যদের মতো গড়পড়তা মনোযোগ দিচ্ছিলেন না তার প্রতি, আলাদাভাবে তাকে কিছু বলছিলেন। সেটা দেখে আমার যে ধারণা হয়েছিল তার প্রমাণ মিললো স¤প্রতি শাইখ সিরাজের ডকুমেন্টারিতে শেখ হাসিনার মন্তব্যে। তিনি বলছিলেন, তিনি ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দু’জনেই শাইখ সিরাজের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের ভক্ত। সত্যি বলতে, ছোটবেলা থেকে আমিও শাইখ সিরাজের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটি দেখি। বিটিভিতে শুরুর দিকে বিকেল বেলা অনুষ্ঠানটি হতো। পরে এর জনপ্রিয়তা বিবেচনায়কে প্রাইম টাইমে নিয়ে আসা হয়। আমার মনে হয় হুমায়ূন আহমেদের নাটকের বাইরে বিটিভির দেশি অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইত্যাদির পরেই জনপ্রিয় ছিল মাটি ও মানুষ। কৃষি নিয়ে খুব আকর্ষণীয় উপস্থাপনা করতেন শাইখ সিরাজ। অনেকেই পছন্দ করতেন সে অনুষ্ঠান। পরে চ্যানেল আইয়ে এসে অনুষ্ঠানটি হৃদয়ে মাটি ও মানুষ নাম নেয়।
বাংলাদেশের মিডিয়ায় কৃষি বিষয়ক ন্যারেটিভ নির্মাণের ক্ষেত্রে শাইখ সিরাজের বড় ভ‚মিকা আছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কৃষি নিয়ে মিডিয়ার ধারণা তৈরি করার ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছেন। ফলে আজকের কৃষি বুঝতে হলে মাটি ও মানুষ এবং হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান দুটি পর্যালোচনা করা খুব দরকার। কিন্তু এ ধরনের কাজ আমাদের দেশে তেমন একটা হয় না। কেউ কাউকে ব্যাজার করতে চায় না। ওপরে যারা থাকে তারা যার যার জায়গায় পরস্পরকে বিরক্ত না করে সুখী থাকতে চায়। ফলে শাইখ সিরাজ দীর্ঘদিন ধরে জেনেটিক্যালি মোডিফাইড ফুড, উচ্চ ফলনশীল জাত, কীটনাশক ও সারের উচ্চ ব্যবহার, হাইব্রিড প্রজাতি জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে যে ভ‚মিকা পালন করেছেন তা আলোচনায় আসে না। শুধু শাইখ সিরাজকে দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশে যারা কৃষি কীটনাশক সার বীজ এগুলোর বৃহৎ ও কর্পোরেট বিজনেসের সঙ্গে জড়িত তারা সকলে মিলে গত প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে আমাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
আমাদের ইকো সিস্টেমে এটা বড় প্রভাব ফেলেছে। দেশীয় কৃষি বীজ কৃষি ব্যবস্থা ও খাদ্য ব্যবস্থা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আমার মনে হয় যারা কৃষি ও খাদ্যনীতি প্রণয়ন করেছেন তাদের চিন্তায় বড় গলদ ছিল। তারা জনসংখ্যা বহুল এই দেশের মানুষের পেট ভরার জন্য যত চিন্তিত ছিলেন, পুষ্টিকর খাবার যোগানোর ব্যাপারে ততই উদাসীন থেকেছেন। ফলে দেশি জাতের পুষ্টিকর মাছের বদলে হাইব্রিড উচ্চ ফলনশীল মাছ চালু হয়েছে। দেশি মাছের জাতগুলো প্রায় ধ্বংস হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ধান এসে দেশি উপকারী ধানগুলোকে ধ্বংস করেছে। হাইব্রিড গরু এসে ভালো গরুকে ধ্বংস করেছে। মানুষের পেট ভরেছে কিন্তু শরীরে অপুষ্টি। এই নীতিটা ভালো কিছু দেয়নি আমাদের।
ইদানীং অবশ্য হৃদয়ে মাটি ও মানুষ আর দেখা হয় না। তবে মাঝে দুই একটা পর্ব দেখেছিলাম, তাতে শাইখ সিরাজ দেশীয় কৃষির কথা বলছিলেন বলে শুনেছিলাম। তিনি জেনেটিক্যালি মোডিফাইড ফুড হাইব্রিড ইত্যাদির সর্বগ্রাসী প্রভাব থেকে বেরিয়ে এলে সেটা এখনো ভালো ফল দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি নিয়ে শাইখ সিরাজ যে অনুষ্ঠানটি করলেন তাতে অনেকদিন পর তার উপস্থাপনা দেখার সুযোগ হলো। অনেক আগেই দেখেছি। নানা ব্যস্ততায় এ নিয়ে লিখতে দেরি হলো। শাইখ সিরাজের অনেক বয়স হয়েছে। সম্ভবত তার বয়স ৬৮। কিন্তু তার যে ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে অনেক বেশি ফিট মনে হলো। হাঁটতে হাঁটতে শাইখ সিরাজ হাঁপিয়ে উঠছিলেন। শেখ হাসিনাই তাকে বলছিলেন, তার হাঁটতে কষ্ট হবে কিনা। শাইখ সিরাজের সেই দরাজ কণ্ঠের জোর আর পাওয়া গেলো না এবার। তিনি নানা কাব্য করে বিষয়টিকে জমিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও তাতে খুব বেশি আমেজ আসেনি। ফাঁকে ফাঁকে শাইখ সিরাজ যথেষ্ট আত্মপ্রচার করলেও চেষ্টাটা আন্তরিক ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে শাইখ সিরাজের এই ডকুমেন্টারিটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি ভালো নির্বাচনী কাজ হয়েছে। ডকুমেন্টারিতে শেখ হাসিনা যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন, লাইভ ছিলেন, ফিট ছিলেন। নিজের অন্য একটা ছবি তিনি আন্তরিকভাবেই দেখিয়েছেন। যে সময়ে নির্মম স্বৈরতান্ত্রিক শাসক হিসেবে শেখ হাসিনার নানামুখী সমালোচনা চলছে সেই সময়ে কৃষিঅন্তপ্রাণ অন্যরকম ব্যক্তি হিসেবে তার সফট দিকগুলো তুলে ধরা খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যারা কঠোর সমালোচক তারাও এই ভিডিও দেখে খানিকটা আর্দ্র হয়ে উঠবেন।
গণভবনের কৃষির খুঁটিনাটি সব দিকের প্রতি শেখ হাসিনার মাতৃসুলভ মনোযোগ কৃষি নির্ভর মানুষকে তার প্রতি নতুন করে আগ্রহী করে তুলতে পারে, এটা হয়তো এই ডকুমেন্টারির উদ্যোক্তাদের মাথায় ছিল। নির্বাচনের আগে এরকম অরাজনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক ইমেজ তৈরির যে রাজনীতি সেটার বাইরে গিয়েও এই ডকুমেন্টারিতে অনেক ইতিবাচক ব্যাপার পাওয়া গেলো।
আমাদের কৃষি বিষয়ক নীতিনির্ধারকরা যতই গাল ফুলিয়ে জিএমও হাইব্রিড কীটনাশক রাসায়নিক সার ইত্যাদির ব্যাপারে ওকালতি করুক না কেন, গণভবনে যে কৃষিচর্চা শেখ হাসিনা করছেন সেটা কিন্তু ঐতিহ্যবাহী দেশী পদ্ধতিতে হচ্ছে। শাইখ সিরাজ বিস্ময় সহকারে বারবার প্রশ্ন করছিলেন, এগুলো সবই দেশি পদ্ধতিতে হচ্ছে কিনা। শেখ হাসিনা তাকে উত্তর দিচ্ছিলেন, একদমই দেশি পদ্ধতিতে হচ্ছে। গণভবনের গরু যে গোবর উৎপাদন করে গোবর থেকেই কৃষি জমির জৈব সার তৈরি হয়। কোনো কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। দেশি জাতের বিভিন্ন শস্য ও ধানের কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা। এমনকি যে হাঁস-মুরগি দেখাচ্ছিলেন, সেগুলোও সব দেশি জাতের। এ প্রসঙ্গে অনেকের ফরহাদ মজহারের কথা মনে পড়বে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় কৃষি পদ্ধতির কথা বলছেন, দেশের নানা স্থানে এই কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে ফরহাদ মজহারের প্রকাশ্য সমালোচনা করলেও কৃষি বিষয়ে তার অবস্থান নিয়ে তাকে আক্রমণ করলেও খোদ গণভবনে নয়া কৃষির আদলে কৃষি চর্চা হতে দেখে নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও নরম হবেন তার প্রতি।
আমার মতে, শেখ হাসিনা গণভবনে যে কৃষি মডেল অনুসরণ করছেন সেটা প্রত্যেকের জন্যই অনুসরণীয়। তবে শহরাঞ্চলে এটা খুবই কঠিন। খুবই এক্সপেন্সিভ জমিতে কৃষি করা শহরে প্রায় অসম্ভব। তবে আমি বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর কথা জানি যারা ঢাকা শহর বা এর আশপাশে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পারিবারিক কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। তারা যে শাকসবজি মাছ মাংস ডিম দুধ খান সেগুলো বেশ যতœ সহকারে দেশীয় পদ্ধতিতে সেখানে চাষ হয়। তারা জিএমও ও হাইব্রিড ফুড এড়িয়ে চলেন। খাসি থেকে গরু হাঁস থেকে মুরগি মাছ থেকে শাক সবই কীটনাশক, ক্ষতিকারক ফিড, রাসায়নিক মুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। তাদের দৈনন্দিন নিরাপদ আহারের ব্যবস্থা এই কিচেন ফার্ম বা পারিবারিক খামার থেকেই হয়। এমনকি এই খামারের গরু যে দুধ দেয় সেই দুধ থেকে দই মিষ্টি পনির ছানা এগুলোও অবস্থাপন্ন ঘরের লোকেরা তৈরি করে দেয়। সর্বৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা হলো, শহরে গ্রামের মতো থাকার ব্যবস্থা করা। শহরের সমস্ত সুযোগ সুবিধা যেমন সেখানে থাকবে তেমনি কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা হবে গ্রামের মতো টাটকা ও নিরাপদ। আবাসস্থল হবে, গাছ গাছালি পাখপাখালি প্রকৃতিঘেরা। শহরের উপকণ্ঠে এমন সুবিধা সবার হয় না। শুধু শীর্ষ অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরা এমন সুবিধা তৈরি করতে পারেন। ইচ্ছা থাকলে নিজস্ব খামারের সরিষা থেকে যে তেল উৎপাদন করাও সম্ভব সেটা গণভবনের সরিষার তেল দেখে বুঝতে পারলাম। ভালো লাগলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরিষার তেল কি সত্যিকার অর্থেই উৎসাহিত করে চলেছেন এটা দেখে।
শেখ হাসিনা পারিবারিক কৃষির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমাদের পুরনো কৃষি ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলছিলেন, তার দাদার আমলে গ্রামের বাড়ির জমিতে যে কৃষিকাজ হতো তাতে একটি পরিবারের সমস্ত চাহিদা মিটে যেত। শুধু লবণ চিনি ও কেরোসিন তেল বাজার থেকে কিনে আনতে হতো। এটা যে কি দারুণ খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেটা বলে দিতে হয় না। আমিও ছোটবেলায় এ ধরনের ব্যবস্থা দেখেছি। সত্যিই পরিবারগুলো লবণ যিনি ও কেরোসিন তেল ছাড়া বাজার থেকে তেমন আর কিছুই কিনতো না। এখন আমাদের সবকিছুই কিনতে হয়। গণভবনের কৃষি হয়তো আমাদের পুরনো ব্যবস্থাকে কিছুটা হলেও মনে করিয়ে দেবে। কেউ কেউ যদি ফিরতে চান এমন অবস্থায় তবে সেটাও সম্ভব হতে পারে। তবে ঢাকা শহরে নয় গ্রামে এ ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।
ডকুমেন্টারিটি দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি খাদ্য নিরাপত্তার একটা চমৎকার উদাহরণ। শেখ হাসিনার নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ। এটি নিঃসন্দেহে খুব ভালো একটা ব্যাপার। তবেই গণভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সম্ভবত খুব অল্প মানুষ দিয়েই পুরো কৃষি ব্যবস্থা চালিয়ে নিতে হয়। একজন সহকারীর উপস্থিতি ভিডিওতে দেখা গেল। আরো দুই একজনের কথা শেখ হাসিনার মুখে উচ্চারণ করলেন। সব মিলিয়ে আমার মনে হলো, এই বিরাট কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা চালাতে প্রধানমন্ত্রীকে অবসরের অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়। আর এ কারণেই হয়তো তিনি এত প্রফুল্ল ও লাইভ থাকেন। লেখক ও সাংবাদিক

সম্পাদক

নাসিমা খান মন্টি

09617175101, 01708156820

[email protected]

১৩২৭, তেজগাঁও শিল্প এলাকা (তৃতীয় তলা) ঢাকা ১২০৮, বাংলাদেশ। ( প্রগতির মোড় থেকে উত্তর দিকে)