প্রভাষ আমিন
শেষ মুহূর্তে এসে ব্যবসায়ীরা বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি, তাই দাম বেশি। তারওপর এবার আছে ডলারের অস্থির বাজারের প্রভাব। একটা বিষয় কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকে না, রমজান এলে যে নিত্যপণ্যের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়বে এটা তো সবাই জানেন। আর কবে রমজান হবে, এটাও তো সবার জানা। ডলারের বাজারের অস্থিরতা, যুদ্ধের প্রভাব; এসবও কারো অজানা নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মূল কাজই হলো, বাজার মনিটরিং, আমদানি মনিটরিং করা। তাদের তো দেশী-আন্তর্জাতিক বাজারের বিষয়ে তথ্য আমাদের চেয়ে বেশি থাকার কথা। কোন কোন পণ্যের আমদানি বাড়াতে হবে, দাম নিয়ন্ত্রণে কোন কোন পণ্যের শুল্ক কাঠামো সাময়িকভাবে হলেও বদলাতে হবে; এটা তো তাদেরই জানার কথা। কারণ এটাই তাদের কাজ। কিন্তু আমি জানি, রমজান এলে ঠিকই বাজারে আাগুন লাগবে। ব্রয়লার মুরগি আর ডিমের বাজার রমজানের আগে ঠিক তো হবেই না, আরও বাড়লেও আমি অবাক হবো না। আর রমজানের যে বিশেষ পণ্য তার দামও বাড়বে। শেষ মুহূর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডলারের দাম, আন্তর্জাতিক বাজার ইত্যাদি রেডিমেড অজুহাত দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবে।
কিন্তু সাধারণ মানুষ পুড়বে বাজারের আগুনে। এমনিতেই বাজারের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, মধ্যবিত্ত টিকে আছে পুষ্টি স্যাক্রিফাইস করে। রমজান এলে তাদের স্যাক্রিফাইসের তালিকা আরও লম্বা করতে হবে। রমজানে এমনিতেই সঙ্কট থাকে। আর সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় অসৎ ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট কাটতে ব্যস্ত হয়ে যান। ব্যবসায়ীরা লাভ করবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু লাভের জায়গা যখন লোভ দখল করে নেয়, সমস্যা হয় তখনই। রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সময় অনেক আগেই ফুরিয়েছে। কিন্তু এখনও একমাস সময় বাকি আছে। এটুকু সময়ের মধ্যে চাইলে সরবার অনেককিছুই করতে পারে। সরবরাহ পরিস্থিতি যাচাই করে, জরুরি কিছু আমদানি করার সময় হয়তো ফুরিয়ে যায়নি এখনও। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা যাতে কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে।
স্বাভাবিক নজরদারির সঙ্গে প্রয়োজনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা সাধারণ মানুষ আনন্দের সঙ্গে সংযমের রমজানটা পালন করতে চাই। আমাদের মাথায় যেন স্রষ্টার সন্তুষ্টির বিষয়টাই থাকে, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বমূল্য নিয়ে যেন ভাবতে না হয়। বাজারের চেয়ে প্রার্থনায় যেন আমাদের বেশি সময় কাটে। লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ