রাজনীন ফারজানা
আমাদের বাবা-মা যাদের জন্ম ষাট-সত্তরের দশকে তারা এতিম হতেন বেশ পরিণত বয়সে। আমার দাদা-দাদী, নানা-নানু চারজনই মারা গেছেন আশি পার করে বা আশির কাছাকাছি। এর চেয়ে কম বয়সেও অনেকেই মারা গেছেন। আমি বলছি, অধিকাংশের কথা। দেখা গেছে আমাদের বাবা-মায়েদের আমলের মানুষ মোটামুটি চল্লিশ পার করে এতিম হয়েছে। কিন্তু আমাদের জেনারেশন যাদের জন্ম নব্বইয়ের আশেপাশে তাদের অনেকেই কিন্তু বিশ-ত্রিশের মধ্যে একজন বা দুজন প্যারেন্টকে হারাচ্ছি। পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে চলে যাচ্ছে আমাদের বাবা-মায়েদের জেনারেশন। সত্তরেও অনেকেই যাচ্ছেন। আমরা আরেকটু বুড়ো হলে কারও বাবা-মা আশির উপর থাকলে সেটাই একটা আশীর্বাদ হিসেবে ধরে নেব।
ভেবে দেখলাম, আমাদের দাদা-নানাদের আমল গ্রামপ্রধান অর্থনীতি থেকে মাত্র চাকরি-বাকরি, মফস্বলি জীবনযাপনে যাওয়া শুরু করেছে। আর আমাদের বাবা-মায়েরা গ্রাম থেকে মফস্বলি আধা শহুরে জীবন পেয়েছে। নব্বইয়ের দশকের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময় তাদের ভরা যৌবন। তারা একটু একটু করে উচ্চাকাক্সক্ষী হয়েছেন।
নিজেরা যে জীবন পায়নি, সন্তানকে সেই জীবন দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। ফলাফল মধ্যবিত্ত অর্থনীতির পরিবারে ছেলে-মেয়েকেই সবটা দিয়েছে। নিজেরা ভালো খায়নি, ভালো পরেনি। চেষ্টা করেছে সন্তানকে দামি স্কুলে পাঠাতে, দামি টিউশন দিতে, প্রয়োজনে উচ্চমূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কিনতেও দ্বিধা করেনি তারা। তারা নিজেদের জীবন উপভোগ করেনি, নিজের যতœ নেয়নি। ফলাফল অল্প বয়সে ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার, হার্ট ডিজিজ। অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধবের বাবা-মা মারা গেছে বা যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাকে। আমরা একটা স্বার্থপর জেনারেশন হিসেবে বড় হয়েছি কারণ আমাদের বাবা-মায়েরা আমাদেরই সবচেয়ে প্রায়োরিটি দিয়েছে। কিন্তু তাদের সেই অবদান, পরিশ্রম আর স্বার্থহীনতার জন্যই কিন্তু আজকের আমরা। আজকের বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতি। আমাদের আগের জেনারেশনের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। ভুলে না যাই তাদের আত্মত্যাগ আর অবদান। ফেসবুক থেকে