
গ্রাহক কমে কোম্পানির স্বেচ্ছাচারিতায়

গোলাম সারোয়ার
প্রথমদিকে গ্রামীণ ফোন কাস্টমারদের অনেক বেশি কন্ট্রোল করতো। ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আনুগত্যের সুযোগে তারা হয়ে উঠেছিলো টেলিস্বেচ্ছাচারী। তারপর মানুষ ধীরে ধীরে অপারেটর বদলাতে থাকে। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, গ্রামীণফোন এখন প্রত্যেক কাস্টমারের কাছে দৈনিক আট দশটি প্রমোশন ম্যাসেজ পাঠায়, ‘আমাদের এটা ভালো, ওটা ভালো, এটা নাও, ওটা নাও’ ইত্যাদি। বেশির ভাগ মানুষ সেসব ম্যাসেজ এখন আর পড়েই না। এটি হলো, কোন ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষ আস্থা হারালে যা হয় তাই। আস্থা হারালে মানুষ নীরবে ব্র্যান্ড ত্যাগ করে। কোনো ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আনুগত্যের সুযোগ নিতে তাই স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই। পৃথিবীতে এখন বাজার অর্থনীতি বিশাল প্রতিযোগিতার ওপেন ময়দান। এখানে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না।
করলে আপনাকে ধীরে ধীরে গ্রাহক হারাতে হবে এবং হারানো গ্রাহক ফিরে পেতে আপনাকে ক্রমান্বয়ে নীচে নামতে হবে। নামতে নামতে আপনি ব্যক্তিত্ব হারাবেন। ব্যক্তিত্ব শুধু ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমন নয়। এটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ প্রতিষ্ঠান নিজেও একটি সত্ত¡া। নতুন খবর হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমটি এখন আয় বাড়াতে নীল টিকচিহ্ন বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে। কারণ কী? কারণ তাদের আয় কমে গেছে। আয় কেন কমে? আয় কমে গ্রাহক কমে গেলে। আর গ্রাহক কেন কমে? গ্রাহক কমে কোম্পানির স্বেচ্ছাচারিতায়। আপনি যা ভাবছেন তাই পৃথিবীর সবার মানদÐ নয়। পৃথিবীতে বহু জাতের, বহু ধর্মের, বহু রুচির এবং বহু মূল্যবোধের মানুষ আছে।
আপনি পৃথিবীর সব মানুষের উপর তাদের ভৌগোলিক অবস্থান, জাতিসত্ত¡া, মনস্তাত্বিক সংবেদনশীলতা কিংবা আচরণগত অনন্যতাকে উপেক্ষা করে শুধু আপনার দেওয়া মানদÐের বিধান চাপিয়ে দিতে পারেন না। যদি তা করতে চান তবে আপনি বেশিদূর যেতে পারবেন না। আপনি বাকস্বাধীনতার কথা বলতে এসে মানুষের বাক রুদ্ধ করে দিতে পারেন না। যেখানে আপনার ব্যবসার মূল পণ্যই ছিলো মানুষের মনের কথা জানার, সেখানে আপনি তাদের মুখ বন্ধ করে দিতে পারেন না। যদি তা করেন তবে পরিণামে আপনাকে নীল টিক থেকে শুরু করে গোলাপি টিপ পর্যন্ত বিক্রি করতে পথে নামতে হবে ক্রমে ক্রমে। এটি পরিবার থেকে মহাদেশ পর্যন্ত, সমুদ্র থেকে মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত। লেখক: কলামিস্ট
