
বইয়ের বাজার ২০০৭ সালের পর থেকে বেশ আনপ্রেডিক্টেবল
শোয়েব সর্বনাম
বইয়ের বাজারটা ২০০৭ সালের পর থেকে বেশ আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে উঠছে। হুট করে একটা পরিবর্তন দেখা যায় এই বাজারে, যখন বøগাররা বাজারে আসেন। সেই বছর সমুদ্র কাশেম, আকাশ আইয়ূব, শূন্য বিছানা ইত্যাদি নামধারি বøগাররা বই প্রকাশ করা মাত্র হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেল। মেলার বেস্টসেলার বইগুলা লেখা হইতে থাকলো বøগারদের কিবোর্ডে। ২০১৩ সালে এসে সেই বাজারে ধস নামে এবং তাদের পাঠকরাই তাদের নামগুলাও এখন আর ঠিকঠাক মনে করতে পারেন না। এরপরে নতুন বাজার তৈরি হয় ফেসবুক সেলিব্রেটিদের, সেই বাজার এখনো আছে। তবে এইটা একটা পরিবর্তনশীল বাজার। একই সেলিব্রেটি প্রতিবছর লোকে খাচ্ছে না। গত কয়েক বইমেলার এক বেস্টসেলার ফেসবুক সেলিব্রেটির বই এইবছর হাজার কপি ছেপে আমার এক প্রকাশক বন্ধু অলরেডি কপাল চাপড়াইতেছেন। নতুন নতুন সেলিব্রেটি ধরে ধরে জোর করে লেখক বানাতে হচ্ছে। আগে বইমেলাগুলাতে সাহিত্যের বইগুলার বাইরে খুব বিক্রি হইতো রান্নার বই, ডেল কার্নেগির সফল হওয়ার সূত্র, কম্পিউটারের হাতেখড়ি ইত্যাদি। সেই বইগুলার বাজার পরবর্তিতে দখল করছে বøগ আর ফেসবুক করা লোকেরা। এই বাজারটা এইভাবেই শাফল করতে করতে থাকবে কোন সন্দেহ নাই। আমাদের সময় ইংরেজি শিক্ষার সবচেয়ে ভাল বই ছিল এফ এম মেথড। লেখক ছিলেন ফিরোজ মুকুল নামের একজন শিক্ষক। কথিত আছে, সেই বই পড়েই খালেদা জিয়া ইংরেজি শিখে বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ করতেন। দেশের বাইরে সকল রাষ্ট্রিয় ট্যুরে ফিরোজ মুকুলকে খালেদা জিয়ার লগে লগে ঘুরঘুর করতে দেখা যাইতো। তবে সেই লোক কখনো নিজেরে বেস্টসেলার দাবি করার চেস্টা করেন নাই।
এখন ইংরেজি শিক্ষার বই লিখে লেখকদের বেস্টসেলার হয়ে যেতে হচ্ছে।
এইবছর কিছু টিভি উপস্থাপক, ইসলামি লোক, মোটিভেশনাল স্পিকার, রাজনীতিবিদ, সেলিব্রেটি ও নারীবাদীদের বই এই বাজারটা ধরতে পারছে। সামনের বছর তাদের বাজার আরেকটু বড় হবে কামনা করি। কিন্তু তাতে সাহিত্যের কিছু যায় আসে না। সাহিত্যের পাঠক মাত্রই জানেন, বইয়ের বাজারটা মূলত সাহিত্যের বাজার। যেইটা কখনো সফল করে না। লেখক এবং সাহিত্যিকের মাঝখানে দাঁড়ায়া থাকা দেয়ালটা এইভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। জীবনানন্দের বেস্টসেলার হওয়া লাগে নাই। এখনো নজরুল জসিমউদ্দীন বিক্রি করে অনেক প্রকাশকের জীবিকা এনে দিচ্ছে। সাহিত্য কোন বইমেলাকেন্দ্রিক ঘটনা না। একজন সাহিত্যিক চাইলেই যখন তখন নামকরা বøগার হইতে পারেন, সেলিব্রেটি ফেসবুকার হইতে পারেন, পপুলার বই লিখে বেচতে পারেন। কিন্তু একজন নামকরা বøগার, জনপ্রিয় ফেসবুকার, পপুলার বইয়ের লেখক চাইলেই সাহিত্যিক হইতে পারেন না। সাহিত্য একটা কমপ্লিট ডিসিপ্লিন, বারুদের ফুলকি জাতীয় কোন ব্যাপার নয়। লেখক: কথাসাহিত্যিক
