প্রভোস্টকে প্রত্যাহারসহ ফুলপরীকে তিন দিনের মধ্যে সিট বরাদ্দ ও নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ ইবির ছাত্রী নির্যাতন: ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার
আমিনুল ইসলাম: কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িত পাঁচজনকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন।
এ ঘটনায় সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থি, অপরাধমূলক ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ কর্মীকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। আর আদালতের নির্দেশে তাৎক্ষনিকভাবে হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয় ক্ষর্তৃপক্ষ।
হাইকোর্টের আদেশে বহিষ্কারের আদেশ পাওয়া ছাত্রীরা হলেন সানজিদা চৌধুরী অন্তরা (পরিসংখ্যান বিভাগ, সেশন: ২০১৭-২০১৮), হালিমা আক্তার ঊর্মি (চারুকলা বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), ইসরাত জাহান মিম (আইন বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১), তাবাসসুম ইসলাম (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১) ও মুয়াবিয়া জাহান (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ, সেশন: ২০২০-২০২১)। তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে। আদালত আদেশে আরও বলেছে, ভুক্তভোগী ফুলপরীকে তিন দিনের মধ্যে সিট বরাদ্দ দিতে হবে। তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি এ ঘটনায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো.মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এদিকে বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় সানজিদাসহ ইবির ৫ ছাত্রীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তবে এ বহিষ্কারাদেশ স্থায়ী কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের উৎসগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছি। সবার সংশ্লিষ্টতা আছে এটা নিশ্চিত। এখন অপরাধ কতটুকু এটা তো বিবেচ্য বিষয়। এখানে তাদের ভুল বা অন্যায় যেটাই হোক, তার গভীরতার ভিত্তিতে স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। এটা স্থায়ীও হতে পারে, নাও হতে পারে।’
উল্লেখ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ ফেব্রæয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ ওঠে। এতে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিম ও হালিমা খাতুন উর্মিসহ কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী। পরে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রæয়ারি একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই দিন পৃথকভাবে শেখ হাসিনা হল ও শাখা ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে সব তদন্তে অভিযুক্তদের নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়। হলের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।