• প্রচ্ছদ
  • আমার দেশ
  • আমাদের বিশ্ব
  • খেলা
  • ইসলামি চিন্তা
  • অমৃত কথা
  • বিনোদন
  • আজকের পএিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • নগর সংস্করণ
  • মিনি কলাম
  • খ্রিস্টীয় দর্পণ
  • প্রবারণা পূর্ণিমা

মিনি কলাম

ঢাকা-বুয়েন্স আয়ার্স উষ্ণ সম্পর্ক : ৪৫ বছরের বাণিজ্যিক ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ

প্রকাশের সময় : March 2, 2023, 12:48 pm

আপডেট সময় : March 2, 2023 at 12:48 pm

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

২৭ ফেব্রæয়ারি সোমবার ঢাকায় লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ আর্জেন্টিনার দূতাবাস উদ্বোধন করে গেলেন সেই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্টিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম অংশগ্রহণ করেন। আজেন্টিনা ১৯৭২ সালের ২৫ মে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলো। ১৯৭৪ সালে ঢাকায় এর একটি মিশন খোলা হয়েছিলো। কিন্তু ৪ বছর যেতে না যেতেই ১৯৭৮ সালে এ মিশনটি বন্ধ হয়ে যায়, তখন উভয় দেশেই সামরিক সরকার ছিলো। এরপর থেকেই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্র্ক দিল্লিস্থ আর্জেন্টিনার দূতাবাসের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি এক অবিস্মরণীয় ঘটনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়।

গত ডিসেম্বরে কাতারে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দর্শকদের সমর্থন আর্জেন্টিনার প্রতি ছিলো নজরকাড়ার মতো। আগে থেকেই বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমিকরা লাতিন আমেরিকার প্রধান দুই দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল টিমের অন্ধ সমর্থকে পরিণত হয়েছিলো। যেহেতু আমাদের দেশের ফুটবল টিম বিশ্বকাপে অংশ নিতে কোনোবারই পারেনি, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে ছেলে-বুড়ো সবস্তরে মানুষের মধ্যেই ফুটবলের প্রতি বড়ধরনের ভালোবাসা দীর্ঘদিন থেকে লালিত হয়ে এসেছে, তাই বিশ্বকাপে গোটা দেশের ফুটবল প্রেমিকরা কোনো না কোনো নামিদামি বা মাঠ কাপানো দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দানকারী টিমের পক্ষে তাদের অবস্থান গ্রহণ করতে থাকে।

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের মধ্যে ফুটবল নিয়ে মাতামাতি আবেগ-উত্তেজনা এবং কোনো না কোনো দলের সমর্থক হয়ে পতাকা উড়ানো, মিছিল করা, রাত জেগে খেলা দেখার আনন্দ উপভোগ করার দৃশ্য এতোটাই বিস্ময়কর যে পুরো বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেই যেনো ফুটবল বিশ্বকাপের খেলা চলার আবেগ অনুভ‚তি সর্বত্র দৃশ্যমান হতে থাকে। আমাদের গণমাধ্যমগুলোতেও বিশ্বকাপ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দলের সমর্থকদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও লেখালেখি করে থাকে। এখন টেলিভিশনের কল্যাণে ঘরে বসে বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ বিস্তৃত হওয়ায় শিশু-কিশোরদের মধ্যেও বিশ্বকাপের প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এবার গ্রামে-গঞ্জেও বড় বড় প্রজেক্টর দিয়ে রাত জেগে খেলা দেখার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।

পাড়া-মহল্লায় কোনো না কোনো দলের সমর্থনে গভীর রাতে মিছিল আনন্দ-উৎসব করার খবরও বিস্তর শোনা গেছে। ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশে বিশ্বকাপ চলাকালে সত্যিকার অর্থেই একটি গণউৎসব চলতে থাকে। এটি প্রায় ১ মাস অব্যহত থাকে। বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সমর্থক লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা দলের প্রতি। এই দুই দলের সমর্থকরা বিশাল বিশাল পতাকা টানিয়ে তাদের সমর্থন, আনন্দ, উচ্ছ¡াস এবং সমর্থন জানানোর যে প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে সেটি শুধু বাংলাদেশের গণমাধ্যমেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়নি, এমনকি আন্টর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে আসে।

এবার কাতার বিশ্বকাপের দর্শক সারিতে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই গিয়েছেন লাতিন আমেরিকার এই দুই দলের সমর্থনে। অন্যান্য দলের সমর্থনেও অনেকে কাতারে অবস্থান করলেও বাংলাদেশের দর্শকদের ফুটবল প্রীতি এতোটাই গভীরতা দেখিয়েছে যে সমর্থক দল হেরে গেলেও লাতিন আমেরিকার এই দুই দলের যেটি শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় সেটির প্রতি সকলের সমর্থন অবিচল থাকে। বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমিকদের বিশ্বাস যে নান্দনিক ফুটবল উপহার দিতে পারে একমাত্র লাতিন আমেরিকার এ দুই দেশ। সুতরাং খেলার শুরুতে দুই দলের বিভক্ত থাকলেও যে দলটি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে সেই দলের প্রতি আমাদের ফুটবল দর্শকরা সমর্থন সমান ভাবে অব্যাহত রাখে। এবার শুরুতে মনেহয়েছিলো, ব্রাজিল জিতবেই কিন্তু ব্রাজিল আউট হয়ে যাবার পর বাংলাদেশের সমর্থকয়েরা আর্জেন্টিনার পক্ষেই উঠেপড়ে লেগেছিল। বিশেষভাবে মেসির সমর্থন বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়েও আগেথেকেই ব্যাপকভাবে ছিলো।

তাছাড়া ব্রাজিলের নেইমারের প্রতিও সমর্থন ছিলো ব্যাপক কিন্তু সবাই চেয়েছিলো এবার মেসি যেনো বিশ্বকাপ হাতে তুলে নিতে পারে। বাংলাদেশের দর্শকদের এমন অন্ধ ভালোবাসা ও সমর্থনের কথা স্বয়ং মেসি, তার পরিবার, আর্জেন্টিনার দর্শক এবং সরকার দেখতে পেয়েছিলো। আর্জেন্টিনার ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের এমন সমর্থনের বিষয়টি সে দেশের জনগণ এবং সরকারের দৃষ্টি কেড়ে ছিলো, বাংলাদেশের প্রতি সে দেশের অভ্যন্তরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরও খবরাখবর ছড়িয়ে পড়েছিলো। বিশ্বকাপ শেষ হবার আগেয় প্রতিশ্রæতি আসতে থাকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করার। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এবং মেসির হাতে ট্রফি উঠতে না উঠতেই বাংলাদেশের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সরকারি ঘোষনা চলে আসে। দুই মাসের মধ্যেই সেই ঘোষণা বাস্তাবায়নও ঘটলো।
এটি এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ক‚টনীতির ইতিহাসে সম্ভাবত এমন নজির আর নেই। ঢাকায় মিশন উদ্বোধন করার জন্য সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে উড়ে এলেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি মিশন উদ্বোধনে বলেন, দুই দেশের মধ্যে আরও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এটি একটি মাইলফলক হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কখনো আর্জেন্টিনাকে ভুলে যায়নি। বরং আর্জেন্টিনা ও তাদের জনগণের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে আর্জেন্টিনার পতাকা উড়িয়ে চলেছে। জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, এটি এক আনন্দের ক্ষণ। বাংলাদেশে পুনরায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু শুধু ক‚টনীতি নয়, আবেগরও বহিঃপ্রকাশ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশ এবং জনগণের গভীর বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে লাতিন আমেরিকার দেশটির কাছে বাংলাদেশের গুরুত্বের প্রতিফলন ঘটেছে।
লাতিন আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে সম্পর্ক স¤প্রসারণের বিষয়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট আগ্রহী। আর্জেন্টিনা লাতিন আমেরিকার শুধু বড় দেশেই নয়, সম্পদশালীও। শতবছর আগেয় দেশটি পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সামরিক শাসনসহ নানা কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাটি বৃদ্ধি করতে পারেনি শর্তেও, কিন্তু বিকাশের সম্ভাবনা অফুরন্ত রয়েছে। সয়াবিন তেলের জন্যও দেশটি বিখ্যাত। সুতারাং দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং অন্যসব সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান হতে পারবে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার বিশাল বাজারে গার্মেন্টস, পাটজাতীয় পণ্য, ওষুধ এবং সে দেশের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিতে লাভবান হতে পারবে। দেশটির বাজার বিশাল। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত আমাদের দেশের পণ্যের বাজারের বড় ক্রেতা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া আর্জেন্টাইনগণ যেহেতু বাংলাদেশকে ভালোভাবে চেনে, এর সম্পর্কে শুনছে, তাই বাংলাদেশের উচিত হবে এখনই দেশটি সমর্থনকে কাজে লাগানোর সর্বত্তম চেষ্টা করা। তাহলেই আমাদের অর্থনৈতিক বাজার বিস্তারে বিশাল এই দেশটির অভ্যন্তরে আমরা দ্রæত জায়গা করে নিতে পারবো।

আর্জেন্টাইগণ পর্যটক হিসেবেও খুবই বেড়াতে পছন্দ করে। আমরা সেই সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারি। দেশটি ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিকভাবেও সমৃদ্ধশালী। বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতকে লাতিন আমেরিকার মানে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেশটির অভিজ্ঞতা এবং সহযোগিতা আমরা অনায়াসেই গ্রহণ করতে পারি। আমাদের দেশ থেকে তরুণেরা আর্জেন্টিনায় গিয়ে অনেককিছু শিখতে পারে। উভয় দেশের আদান প্রদান, অভিজ্ঞতার বিনিময় এবং যোগাযোগ স্থাপন আমাদের দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আর্জেন্টিনায় অনেক কাচা পণ্য, যন্ত্রপাতিসহ নানা উপকরণ রয়েছে, যা আমাদের দেশের কৃষি শিল্পের উন্নয়নে বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। আমাদের ব্যবসায়ী মহলও সেই সুযোগটি ব্যবহার করতে পারে। ৪৫ বছর আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি। এখন থেকে নতুন ক‚টনৈতিক মিশন ঢাকায় খোলার মাধ্যমে বুয়েন্স-আইরেসের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুধু ৪৫ বছরের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ায় নয়, সম্মুখের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য স্মার্টলি যেন এগিয়ে চলি, সেই চেষ্টা আমাদের দিক থেকে অব্যাহত থাকবে।

পরিচিতি : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট। অনুলিখন : খসরুল আলম

সম্পাদক

নাসিমা খান মন্টি

09617175101, 01708156820

[email protected]

১৩২৭, তেজগাঁও শিল্প এলাকা (তৃতীয় তলা) ঢাকা ১২০৮, বাংলাদেশ। ( প্রগতির মোড় থেকে উত্তর দিকে)