তাইওয়ানের কাছে ৬১৯ মিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল বাইডেন প্রশাসন
রাশিদুল ইসলাম : বাইডেন প্রশাসন তাইওয়ানের কাছে ৬১৯ মিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে এফ-১৬ ফাইটার জেটের জন্য শত শত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা সম্ভবত ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে বর্ধিত উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল
বাইডেন প্রশাসন বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসকে এফ-১৬ জঙ্গি বিমানের যুদ্ধাস্ত্র ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের প্রস্তাবিত বিক্রয়ের বিষয়ে অবহিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন এধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রয় তাইওয়ানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এবং আমাদের দীর্ঘস্থায়ী এক-চীন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিষেবাগুলিকে পর্যাপ্ত আত্মরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে যাবে। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, তাইওয়ান এসব ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের জন্য নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করবে।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন এ ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ চীনকে ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সমরাস্ত্র বিক্রির এ প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে ১০০টি এজিএম-৮৮বি হাইস্পিড অ্যান্টিরেডিয়েশন মিসাইল (এইচএআরএম), ২০০টি এআইএম-১২০ সি-৮ অ্যাডভান্সড মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল (এএমআরএএএম), প্রশিক্ষণের জন্য লঞ্চার ও নকল মিসাইল। পেন্টাগন বলেছে, এ সমরাস্ত্র তাইওয়ানের আকাশসীমার প্রতিরক্ষা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইপের একযোগে কাজ করার সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
নতুন বছরে তাইপের কাছে ওয়াশিংটনের প্রথম অস্ত্র বিক্রির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে তাইওয়ান। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদে এখন পর্যন্ত তাইওয়ানের কাছে নয়বার অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইপে অভিযোগ করে, গত মঙ্গলবার থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাইওয়ানের আকাশে চীনের ১৯টি জে-১০ যুদ্ধবিমান দেখা গেছে। এর মধ্য দিয়ে চীন আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ কাজ চীন প্রায়ই করে বলে তাইপের অভিযোগ। তবে চীন বলছে, তারা কোনো আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি। তারা যা করেছে, তা ন্যায়সংগত। কারণ, তাইওয়ান তাদের ভৌগোলিক অখÐতার অংশ।
তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে একটি চীনা নজরদারি বেলুন শনাক্ত হয়। পরে বেলুনটিকে ভ‚পাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং তাইওয়ান তার আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে পদক্ষেপ নেয় তা দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রণালী জুড়ে এবং অঞ্চলের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অবদান রাখে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রলালয়ের এক বিবৃতিতে বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্র এবার যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে রাজি হয়েছে তাতে বিমান বাহিনীর সম্পূর্ণ যুদ্ধ করার ক্ষমতা বাড়াবে। বিশেষ করে চীনের সামরিক বাহিনীর উস্কানি থেকে কার্যকরভাবে আমাদের আকাশসীমা রক্ষা করার অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি, এটি আমাদের অস্ত্র মজুত করতে এবং আমাদের প্রতিরক্ষামূলক স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তাইওয়ানে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রের মজুদ আঞ্চলিক শান্তি রক্ষার ভিত্তি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিনের কাছ থেকে ৬৬টি নতুন এফ-১৬ জঙ্গী বিমান কিনেছে এবং সেগুলির সরবরাহ এই বছর শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার ইউএস ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জামের প্রতিরক্ষা ঠিকাদার হবে রেথিয়ন এবং লকহিড মার্টিন। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ