পঞ্চগড়ে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের
পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, আহমদিয়াদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর-লুটপাট এবং পুলিশের সাথে বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। সড়ক মহাসড়কে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলছে। জেলা শহরের সকল দোকানপাট খোলা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৭ প্লাটুন বিজিবি’র সঙ্গে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান এবং আহমদনগর ও শালশিড়ি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় সকাল থেকে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা কড়া পাহাড়ায় রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার রাতে সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করে পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক মাইকিং করার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। শনিবার সকাল থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সালানা জলসায় আসা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন জলসাস্থল থেকে পঞ্চগড় ছাড়তে শুরু করে। মুসল্লিদের-পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় নিহত পঞ্চগড় জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুজ্জামান আরিফের (২৭) নামাজে জানাযা ও দাফন গতকাল শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় গোরস্থানে সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিহত যুবকের নাম জাহিদ হাসান (২৩)। তিনি নাটোরের বনপাড়া পৌরসভার চিরোইল মহল্লার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে বলে জানা গেছে। শুক্রবারের ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ মিঞা জানান, বর্তমানে আইন শৃখংলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে গত শুক্রবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আহমদিয়াদের বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুর করে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ২ নিহত এবং পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। সর্বস্তরের তৌহিদী জনতার ব্যানারে উচ্ছৃংখল জনতা আহমদনগরে আহমিয়াদের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই দাবিতে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে জেলা শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় বিক্ষোভ করে মুসল্লিরা।
শনিবার বিকাল আহমদনগরে জলসাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেছে আহমদিয়া মুসলিম জামাত। ৯৮তম জলসা সালানার আহবায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন শুক্রবারের ঘটনায় তাদের একজন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়েছে। নিহত ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হোসেন (২৩) এর বাড়ি নাটোরের বনপাড়ায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রথমে পঞ্চগড় এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় গুরুত্বর আহতদের এখন রংপুর থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে শুক্রবার আহমদনগর ও ঝালশিরি গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়িতে আক্রমণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চগড় বাজারে আমাদের সদস্যদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা বলে তিনি দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দুই গ্রামের আক্রমণের তিন ঘণ্টায় আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো সহায়তা পাইনি। অত্র এলাকায় তাদের উপস্থিতি থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিস্ক্রিয় ছিল। এ ঘটনায় আমরা পঞ্চগড় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানায়নি।