প্রফেসর তানজিমকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পান্ডারা ঘোট পাকাতে চেয়েছিল
আনু মুহাম্মদ
প্রকৃত শিক্ষকের মূল শক্তি আর প্রেরণা তাঁর শিক্ষার্থীরাই। তানজিমকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পান্ডা লোকজন ঘোট পাকাতে চেষ্টা করছিলো, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, শিক্ষার্থীরাই তাঁকে ঘিরে রাখবে।
‘’এহসানুল্লাহ ধ্রæবের আত্মহত্যা চেষ্টা এবং প্রফেসর ড. তানজিমউদ্দীন খানের অবস্থান স্পষ্টীকরণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ১৩তম ব্যাচের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি:”গত পরশু; ২ মার্চ, ২০২৩; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এহসান ধ্রæব তার ফেসবুক প্রোফাইলে বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে দোষী উল্লেখ করে আত্মহননের ঘোষণা প্রচার করেন। সেই পোস্টে তিনি তানজীম স্যারকে প্রেরণ করা একটি মেইলের স্ক্রিনশটও যুক্ত করেন।
পোস্টটি দেওয়ার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। অনেক চেষ্টার পর আনুমানিক রাত ১২:৩০ টায় শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে এহসান ধ্রæবকে পাওয়া যায় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। অত্যন্ত স্বস্তির ব্যাপার এই যে, সে বর্তমানে সুস্থ আছে এবং বাসায় অবস্থান করছে। কিন্তু ইতিমধ্যে এহসান ধ্রæব’র প্রচারিত একপাক্ষিক বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মহল বিভ্রান্তিবশত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার করতে শুরু করে এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থান গ্রহণ করে। এই প্রেক্ষিতে জনমনে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীবৃন্দ, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এহসান ধ্রæব’র এই প্রতিক্রিয়া সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিজেদের বক্তব্য এবং অবস্থান স্পষ্ট করছি।
ঘটনার শুরু ০২ মার্চ বিকালে, তানজীম স্যারের ক্লাস চলাকালীন। সম্ভবত ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এহসান ধ্রæব স্বপ্রণোদিত হয়ে তানজীম স্যারের কাছে ব্যাচের একটা বিষয়ে অভিযোগ দেয়। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগ সেই ঘটনায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতাও নেই। সে ক্লাসে আসার আগেই স্যার আমাদের ক্লাস শুরু করেন এবং ইতোমধ্যে তিনি সহপাঠীদের নিয়ে গুজব ছড়ানোকে ইর্যাশনাল বিহেভিয়ার হিসেবে অভিহিত করেন। এরপরে তিনি আমাদের পড়ানো শুরু করেন।
ক্লাসের মাঝামাঝি সময়ে এহসান ধ্রæব ক্লাসরুমে প্রবেশ করে। ক্লাসের শেষের দিকে স্যার ধ্রæবকে দাঁড়াতে বলেন এবং তার রটানো গুজবের সুত্র সমন্ধে জানতে চান। ধ্রæব কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এর বদলে স্ক্রিনশট দেখানোর ইচ্ছা পোষণ করে। তানজীম স্যার এরপরও নাম বলায় গুরুত্ব আরোপ করলে সে নাম বলতে ব্যর্থ হয়। তানজীম স্যার তখন সহপাঠীদের নামে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে বারণ করেন। প্রতুত্তরে এহসান ধ্রæব আশ্চর্জজনকভাবে “ঞযবু পড়হংঢ়রৎবফ ধমধরহংঃ সব ংড় ও পড়হংঢ়রৎবফ ধমধরহংঃ ঃযবস” এই স্বীকারোক্তিমূলক বাক্যটি ব্যবহার করে যা শুনে স্বাভাবিকভাবে আমরা অবাক হই।
এরপর তানজীম স্যার তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজের সহপাঠীদের সম্পর্কে কী বলা যায় আর যায়না সেটি তার বোঝা উচিত। প্রত্যুত্তরে যখন ধ্রæব কিছু বলতে চায় তখন স্যার তাকে থামিয়ে বলেন যে একজনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে কুৎসা রটনা করার অধিকার তার (ধ্রæব) নেই। এরপর স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলে ধ্রæব তার কাছে ক্ষমা চাইতে যায়। পরবর্তীতে স্যার তার সাথে নিচে নেমে তাকে ফুচকা খাওয়ান।
এই ঘটনায় আমাদের সহপাঠী ধ্রæব’র ফেসবুক পোস্ট এবং আত্মহননের চেষ্টা বেশ দুঃখজনক। কিন্তু একটা ব্যাপার ভালো ভাবে স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে এই পুরো ঘটনার সাথে এহসান ধ্রæব’র রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনোই যোগসূত্র ছিল না।
এহসান ধ্রæব কে খুঁজে বের করতে আমাদের ব্যাচ এবং সম্পূর্ণ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ সর্বাধিক তৎপরতা প্রদর্শন করেছে। আমরা তার দ্রæততম সুস্থতা কামনা করছি। তবে উপরে বর্ণিত প্রেক্ষাপট এবং পরশু থেকে এখন অব্দি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে কিছু কথা স্পষ্ট করা অত্যধিক জরুরি। এহসান ধ্রæব’র সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার কার্যকারণ একান্তই ব্যক্তিগত। এই ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানের ভূমিকা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিলো এবং তা নির্দ্বিধায় প্রশংসার দাবিদার। একজন নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যে ভূমিকা পালন করার কথা, তিনি তাই করেছেন। ঠিক কী কারণে এহসান ধ্রæব এই ঘটনার সাথে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় জুড়ে দিয়ে একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করলো তা ক্লাসে উপস্থিত পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থীর কাছে দুর্বোধ্যই বটে। তানজীম স্যার এই ঘটনা চলমান অবস্থায় ছাত্রলীগ কিংবা কোনোপ্রকার রাজনৈতিক পরিচয়ের দিকে বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত না করলেও স্যারের নামে এই ধরণের কুৎসা রটানো কিংবা বিদ্বেষমূলক আচরণ সত্যিই দুঃখজনক।
এহসান ধ্রæব’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক উস্কানি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অমূলক এবং তা প্রতিরোধ করতে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের প্রত্যেক শিক্ষার্থী সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবে, এই প্রত্যয় আমরা ব্যক্ত করতে চাই। পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক এবং শিক্ষার্থী মহল কে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহŸান জানাই।