• প্রচ্ছদ
  • আমার দেশ
  • আমাদের বিশ্ব
  • খেলা
  • ইসলামি চিন্তা
  • অমৃত কথা
  • বিনোদন
  • আজকের পএিকা
    • প্রথম পাতা
    • শেষ পাতা
  • নগর সংস্করণ
  • মিনি কলাম
  • খ্রিস্টীয় দর্পণ
  • প্রবারণা পূর্ণিমা

মিনি কলাম

টিসিবির লাইনের চালচিত্র এবং একজন গোলাম মোস্তফা

প্রকাশের সময় : March 5, 2023, 10:40 pm

আপডেট সময় : March 5, 2023 at 10:40 pm

কাকন রেজা

একজন নিরাপত্তারক্ষী গোলাম মোস্তফা। অন্যের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করেন, কিন্তু নিজের যাপিত জীবন অনিরাপদ। মানুষের প্রথম মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য। যে জীবনে খাদ্য নিরাপত্তা নেই তার চেয়ে অনিরাপদ জীবন আর কিছু হতে পারে না। কেন পারে না বলছি। ২ মার্চে রাজধানীর মিরপুরে একটি খোলা বাজারের দোকানে চাল কিনতে দাঁড়িয়ে ছিলেন গোলাম মোস্তফা নামক বয়স্ক মানুষটি। সকালে লাইনে দাঁড়ান, দুপুর হয়ে যাচ্ছিলো, তবু লাইন থেকে সরেননি, পাছে জায়গাটা অন্য কারো দখলে চলে যায়। কিন্তু শরীর ধকল সইতে পারেনি।

অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি লাইনেই। অজ্ঞান হলেও লাইনের বাইরে যাননি তিনি। মরি কিংবা বাঁচি উপায় নেই আমাদের সাধারণ মানুষদের লাইনের বাইরে যাবার। শঙ্খ ঘোষ তার কবিতা ‘সবিনয় নিবেদন’র এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘তাদের জীবন-দিয়েছি নরক করে’। কয় কেজি চাল বা আটার জন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলোর জীবন সত্যিই নরক হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, বিপরীতে আয় বাড়েনি এক টাকাও। বাধ্য হয়েই খোলাবাজার, টিসিবির লাইন খুঁজতে হচ্ছে। দাঁড়াতে হচ্ছে সাত সকালে এসে। কতক্ষণে পাওয়া যাবে কিংবা যাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব যেন কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। সবকিছু চলছে এমন ভাবেই।

গোলাম মোস্তফার কথায় আবার আসি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তিনি, তারপর দু’দিন ধরে পাতলা পায়খানা, এ অবস্থাতেও একজন মানুষের যখন চালের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়, তখন আমাদের সব উন্নয়নের গল্পও পাতলা হয়ে যায়। গোলাম মোস্তফা নিজে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন, তার স্ত্রীও কাজ করেন একটি কারখানায়। ছেলেটিকে উচ্চশিক্ষিত করা সম্ভব হয়নি সেও ছোটখাটো কাজ করে নিজের খরচ নিজে চালায়। এই হলো আমাদের সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র। অসাধারণদের কথা আলাদা। তাদের লিমিট হলো স্কাই। তারা আকাশ ছুঁতে চায়। দেশের বাড়িতে সন্তুষ্ট নয়, সেকেন্ড হোম চাই। আরও অনেক কিছুতেই ‘সেকেন্ড আইটেম’ চাই। সে কথায় আর না যাই, গোলাম মোস্তফার কথা বলি। বাজারে মোটা চাল ষাট টাকা। খোলা বাজারে ত্রিশ টাকায় পাওয়া যায়। পাঁচ কেজি চালে বেঁচে যায় দেড়শ টাকা। একজন মানুষ এই দেড়শ টাকার জন্য নিজের জীবন বাজি লাগায়। আহা কি স্বাচ্ছন্দ্যের দেশে বাস করি আমরা। কী আনন্দের দেশে। কারো প্লেট ভর্তি নানা পদের খাবার পড়ে থাকে, আরেক গোলাম মোস্তফা দেড়শ টাকা বাঁচাতে চালের লাইনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন।

টিসিবির লাইনের চিত্রও আমরা দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছি। সেদিন দেখলাম চাল সংগ্রহ করতে এক বয়স্কা মহিলা ট্রাকে উঠে পড়েছেন। কিন্তু তাকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে ট্রাক থেকে। তিনি থেমে যাননি। চাল দেওয়া শেষ হলে ট্রাকের খোলে পড়ে থাকা চাল কুড়িয়ে দেড় কেজির মতন চাল সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এও কম কি, একবেলার আহার তো হবে। উন্নয়নের গল্পে যোগ হবে একবেলা আহারের গর্ব। ফুটনোটে ধন্যবাদ জানাই গণমাধ্যমকে। যারা মাঝেমধ্যে লাইন থেকে বের হয়ে এসে চালের লাইনের খবর করেন। গোলাম মোস্তফাদের কথা জানান দেন। এই খবরটা পড়েছি প্রথম আলো’তে। আরও কেউ কেউ লাইন ভাঙার চেষ্টা করেন এবং মাঝেমধ্যে ভাঙেনও। তাদের সবাইকে স্যালুট।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সম্পাদক

নাসিমা খান মন্টি

09617175101, 01708156820

[email protected]

১৩২৭, তেজগাঁও শিল্প এলাকা (তৃতীয় তলা) ঢাকা ১২০৮, বাংলাদেশ। ( প্রগতির মোড় থেকে উত্তর দিকে)