
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ খরচ কম : সালমান এফ রহমান

আমিনুল ইসলাম : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চাইতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে খরচ কম। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে বাংলাদেশে। এছাড়া খরচের প্রতিযোগিতাই এশিয়ার অন্যান্য শহর করাচি, মুম্বাই, নিউ দিল্লী, হ্যানয়, ব্যাংকক, ম্যানিলা, কুয়ালামলাম পুর, এবং বেজিংয়ের তুলানায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ খরচ অনেক কম। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীদের শুধুমাত্র শ্রমিক খাতে সাশ্রয় হবে ৪৭ থেকে ৮৪ শতাংশ। ম্যানেজারস স্যালারিতে সাশ্রয় হবে ৪১ থেকে ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া ৬ থেকে ৮৯ শতাংশ সাশ্রয় হবে পানিতে, বিদ্যুতে সাশ্রয় হবে ১০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।
গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে হল অফ ফেমে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত চলমান বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩ এ বাংলাদেশ ঃ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিস ইন কী সেক্টরস ফর ইনভেস্টর্স টু লিভারেজ’ শীর্ষক প্লানারি সেশনে এ আহŸান জানান তিনি। সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেষ্ট অফ অনার হিসাবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। প্লানারি সেশনে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং হামিম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, ইয়াং ওয়ান করপোরেশনের সিইও কি-হাক সাং, মারুবেনি করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট এন্ড সিইও মাসুমি কাকিনোকি, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রোমশন অথরিটি’র ডিজি জং ওন কিম এবং কমনওয়েল্থ এন্টারপ্রাইজ এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল এর চিফ এক্সিকিউটিভ রোসি গøাজিব্রোক। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সালমান এফ রহমান।
সালমান এফ রহমান আরো বলেন, বাংলাদেশে ২০৪০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে রুপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, রামপাল কয়লা বিদ্যু কেন্দ্র, মহেশখালি এলএনজি টার্মিনাল, পদ্মা ব্রিজ, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, ঢাকা মেট্টরেল, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা চ্টগ্রাম এক্সপ্রেস রেলওয়ে, কর্ণফুলি ট্যানেল এবং ঢাকা বিমানবন্দরের তার্ড টার্মিনালে প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে ৬৫ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। বিনিয়োগকারিরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টে এ সুযোগ নিতে পারেন । এছাড়াও বর্তমানে বেশ কয়েকটি বড় বন্দর, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদ্যুও জ¦ালানী খাতে বড় পরিবর্তন, পর্যাপ্ত জমি, বাণিজ্যিক পরিবেশের উন্নয়ন ইত্যাদি কারণে আগামীতে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিউ এশিয়ান টাইগার হবে বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল ইকোনমির জন্য সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত। বর্তমানে ১২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এছাড়া সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার আছে, দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাই লেবার আছে, যারা নিজ ঘরে বসে কাজ করে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের আইটি পণ্য এবং সেমি কন্ডাক্টর পণ্য রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠবে। আর দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। কোনো ধরনের অনিয়মকে আমরা ছাড় দেই না। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা খাতে সুবিধা রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় বলতে পারি আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ হবে নিরাপদ।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি হামীম গ্রæপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, বিশ্বে এখন ম্যানমেড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতারা এখন ম্যানমেড ফাইবার পণ্য চায়। এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এফবিসিসিআই’র এমন উদ্যোগ থাকলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আনা আরও সহজ হবে। আমাদের দেশে ভালো জব মার্কেট আছে, যেটা অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। ইকোনমিক জোনে নন-স্টপ সার্ভিস শুরু হয়েছে। সুতরাং বলতে পারি এ দেশে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন।
ইয়াং ওয়ান করপোরেশনের সিইও কি-হাক সাং বলেন, আমি ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছি। এখানে ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক ভালো বন্ধ তৈরি হয়েছে। আমি আপনাদেরও এখানে বিনিয়োগের আহŸান জানাই।
