বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে টি-২০ জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
মাসুদ মিয়া: ইতিহাসগড়া জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট। এমন সমীকরণের সামনে ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন ক্রিস জর্ডান। এই পেসারের প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে সমীকরণ সহজ করেন শান্ত। এরপর একই ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পরপর চার মেরে ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। মিরপুরে গতকাল রোববার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের ১১৭ রান টপকাতে বাংলাদেশকে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে হারিয়ে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে দারুণ এক জয় পায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিই জিতেছে বাংলাদেশ, শেষ ম্যাচটা এখন ইংল্যান্ডের জন্য ধবলধোলাই এড়ানোর লড়াই। ঘরের মাঠে এর আগেও বড় দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
তবে গত নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরা বাটলারদের সেই বিশ্বকাপের পরের সিরিজেই হারানো নিশ্চয় আলাদাভাবে মনে রাখবেন সাকিবরা। রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আগের ম্যাচের মতো আগ্রাসী শুরু দেখা যায়নি। ১১৭ রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে মন্থর ব্যাটিংয়ের পথটাই বেছে নিয়েছেন লিটন দাস ও রনি তালুকদার। কিন্তু ইংল্যান্ড সিরিজজুড়ে রান খরায় থাকা লিটন গতকালও আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন ভুল শট খেলে। সহজ রান তাড়ার ম্যাচের তৃতীয় ওভারে স্যাম কারেনের বলে ডিপ মিড উইকেটে থাকা একমাত্র ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন এই ওপেনার।
আরেক ওপেনার রনিও গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি। জফরা আর্চারের করা পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন রনি। ১৪ বল খেলে ১টি চারে মাত্র ৭ রান এসেছে রনির ব্যাট থেকে। তবে শুরুর ধাক্কাটা সামলে নেন আগের ম্যাচে ভালো করা নাজমুল হোসেন ও তৌহিদ হৃদয়। দুজন মিলে ৩১ বলে ২৯ রান যোগ করেন। তবে দুজনের জুটি লম্বা হতে দেননি অভিষিক্ত রেহান আহমেদ। তাঁর বিশাল টার্ন মেশানো লেগ স্পিনে পয়েন্টে ক্যাচ দেন হৃদয়। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ১৭ রান করেন তিনি। তখনো রেহান ও আদিল রশিদের আরও ৬ ওভার বাকি। সঙ্গে জফরা আর্চারের আরও ২ ওভার যোগ করুণ। সেটি সামলে ভালোই খেলছিলেন নাজমুল ও পাঁচে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। ভাগ্যও পক্ষে ছিল। কিছু বল টার্ন করে গিয়েছে স্টাম্পের পাশ ঘেঁষে, কিছু টপ এজ গিয়েছে ফাঁকা জায়গায়। এর মাঝে নাজমুল ও মিরাজ খেলেছেন কিছু সাহসী শট। তাতে রান তাড়ার চাপে পড়েনি এই দুই ব্যাটসম্যান। দুজন মিলে ৪১ রান যোগ করেন ৩২ বলে। আর্চারের বলে মিরাজ শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৬ বলে ২০ রান করে।
সাকিবও ম্যাচ শেষ করতে পারেননি। মঈন আলীর বলে কোনো রান না করেই ক্যাচ আউট হন তিনি। তবে নাজমুল বাকি পথটা পাড়ি দেন তাসকিন আহমেদকে নিয়ে। তিনে নেমে নাজমুল অপরাজিত ছিলেন ৪৭ বলে ৪৬ রানে। ৩টি চার ছিল নাজমুলের ইনিংসে। ৩ বল খেলে ২টি চারসহ ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তাসকিন।
ব্যাটসম্যানদের কাজটা অবশ্য সহজ করছেন বোলাররা। প্রথম ম্যাচের পরেই ইংল্যান্ড ব্যাটিং অর্ডারে চারজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকায় একজন বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনারের অভাব অনুভব করছিল টিম ম্যানেজম্যান্ট। সে চিন্তা থেকেই গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শামীম হোসেনকে বসিয়ে সুযোগ দেওয়া হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। সেই মিরাজই গতকাল ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ধস নামান ইংলিশ ব্যাটিংয়ে। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করলে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১১৭ রানে।
তবে মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন পেসাররাই। বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ব্যাট করতে নেমেই নতুন বলে তাসকিন আহমেদের তোপের মুখে পড়ে ইংলিশ টপ অর্ডার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তাসকিনের বাউন্সারে কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে থাকা হাসান মাহমুদের হাতে ধরা পড়েন ডেভিড ম্যালান। পরে অবশ্য পাওয়ারপ্লেটা ভালোই খেলেছে ইংল্যান্ড। ফিল সল্ট ও তিনে নামা মঈন আলী প্রথম ৬ ওভারে ৫০ রান তোলেন।
কিন্তু পাওয়ারপ্লের পরেই ফাটল ধরে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপে। ইনিংসের সপ্তম ওভারে সাকিব আল হাসান প্রথম বোলিংয়ে এসেই সল্টকে বিদায় করেন। গতি কমিয়ে এনে বিশাল এক টার্নে ইংলিশ ওপেনারকে বোকা বানিয়ে আউট করেন সাকিব। তবে ইংলিশরা বড় ধাক্কাটা খায় অধিনায়ক জস বাটলারের আউটে। প্রথম ম্যাচে হাসান মাহমুদের বলে আউট হয়েছিলেন বাটলার।
বাটলার ক্রিজে আসতে না আসতেই হাসানকে বল তুলে দেন সাকিব। আর ইংলিশ অধিনায়ককে আউট করতে ৪ বল লেগেছে হাসানের। তিনটি লেংথ বলের পর চতুর্থ বলে স্পাইক তাক করা ইয়র্কারে বাটলারের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন হাসান।
এরপরের গল্পটা মিরাজের। টার্ন, বাউন্সের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইংল্যান্ডের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখেন তিনি। পরে একে একে ৪ উইকেট শিকার করেন।
শুরুটা হয় ১৭ বলে ১৫ রান করে থিতু হওয়া মঈনকে দিয়ে। একে একে মিরাজের ফাঁদে পা দিয়েছেন স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান। চাপের মুখে ইংল্যান্ডও খেলেছে এলোমেলো ক্রিকেট। শেষ তিন ব্যাটসম্যানের তিনজনই তালগোল পাকিয়ে রানআউট হয়েছেন।
এর বড় একটা কারণ হতে পারে সাকিবের অধিনায়কত্ব। গতকাল তিনি ২০ ওভার করিয়েছেন ৮ জন বোলার দিয়ে। নিয়মিত বোলার নাসুম আহমেদ মাত্র ১ ওভার করেছেন। প্রথম ২ ওভারে ভালো করার পরও হাসানকে আর বোলিংয়ে আনেননি। মন্থর উইকেট এই দুই বোলারের বাড়তি গতি বাড়তি রানের কারণ হতে পারে বলেই হয়তো তাদের বোলিংয়ে আনেননি সাকিব। তবে তিনি যা-ই করেছেন, সেটি কাজে দিয়েছে। বাংলাদেশও পেয়েছে ইংল্যান্ডকে সিরিজে হারানোর আদর্শ মঞ্চ।