আনু মুহাম্মদ
শুধু যমুনা নদী নয় বা শুধু কিছু মূর্খের চিন্তাভাবনা নয়, এগুলো বড় বড় নদী নিয়ে অনেক বড় বড় প্রকল্পের অংশ। কয়েকমাস আগে পত্রিকায় দেখলাম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ‘উন্নয়ন’ ভাষ্য: ‘বাংলাদেশে নদীগুলো অনেক প্রশস্ত। এতো প্রশস্ত নদী বিশ্বের কোথাও নাই, দরকারও নাই, অনেক সমস্যা হয়। তাই প্রস্থ কমিয়ে সেখানে রিসোর্ট বানাতে হবে, কৃষিজমি বানাতে হবে।’ প্রথমে ভাবলাম যে, এরকম নির্বোধের মতো কথা ক্ষমতাবানরা বিভিন্ন সময়ে বলেই থাকেন।
এগুলোকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নাই। কয়দিনও পার হয়নাই। জানলাম মন্ত্রীর এই কথা আকস্মিক ব্যক্তি নির্বোধ উক্তি নয়। নদী কেটে সরু করা একাধিক মেগা প্রকল্পের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারিত।
বিশ্বব্যাংক এডিবি ঋণে নেয়া হয়েছে ‘রিভার ব্যাংক ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান’। ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা রক্ষার নামে এই প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে নদীর প্রস্থ কমিয়ে জমি ‘উদ্ধারের’। নৌপথে ভারতের ট্রানজিট সহজ করার জন্য নদী ড্রেজিং এবং গভীর চ্যানেল তৈরির কাজ চলছে। উজানে ভারতের একাধিক বাঁধের কারণে তিস্তা নদী আক্রান্ত। সেবিষয় ফয়সালা না করে এখন অবশিষ্ট পানির তিস্তা নদী নিয়ে চীনা ঋণে এক মহাপরিকল্পনায় এই নদী সরু করে পারে রাস্তা, রিসোর্ট ইত্যাদির প্রকল্প তৈরি হয়েছে। এর বাইরে আছে বড় নদীগুলো নিয়ে ‘সাসটেইনেবল রিভার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’।
খুন জখম হবার পর দেশে নদীর সংখ্যা কতো আছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। সরকারের বিভিন্ন দলিলে বিভিন্ন রকম। গড় হিসাবে বোঝা যায় দুই তৃতীয়াংশ নদীই এখন নাই। দেশে বহু সেতু কালভার্ট আছে যেগুলোর নীচে কোনো নদী বা পানি প্রবাহ নাই, এতটুকু বোঝা যায় এখানে এককালে নদী বা তার কোনো শাখা ছিল।
নৌপথও তাই এখন এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। ভারতে উজানে বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্প ছাড়াও নদী নিয়ে দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের বড় অবদান আছে এর পেছনে। একই ধারায় তৈরি হয়েছে নদী নিয়ে শতবর্ষের ব্যাপক ব্যয়বহুল ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’। এই সব প্রকল্পই বিদেশি ঋণে। কনসালট্যান্ট, আমলা, প্রকৌশলী, নির্মাণ কোম্পানি সবার জন্যই দীর্ঘসময়ের আয় উপার্জনের ব্যবস্থা। কিন্তু যাদের নদী সেই মানুষেরা এইসব সর্বনাশা আয়োজন সম্পর্কে কিছুই জানেন না।