
সিটি করপোরেশনকে কেন মার্কেট বানিয়ে ব্যবসায় নামতে হবে?

ওয়াসি মাহিন : প্রায় প্রতিটি দেশের রাজধানীকে রাণীর মতোই সাজানোর চেষ্টা থাকে। এটা আমাদের গুলিস্তানের পুরাতন ছবি। আধুনিক শহুরে ঢাকার যখন শুরু, তখন ঢাকার সবথেকে অভিজাত এলাকা ছিল রমনা। এরপর যখন বাণিজ্যের কেন্দ্রে ঢাকা শহর বিকশিত হতে থাকে তখন ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বলা যেত মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাকে। পাশেই গুলিস্তান। নতুন শতাব্দিতে ধীরে ধীরে মতিঝিলের সব জৌলুস কমতে থাকে। মতিঝিলের গুরুত্ব হারানোর জন্য দায়ী যে কারণ সেটা একেকজন একেকভাবে ব্যাখা করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এর পেছনে দায়ী হলো গুলিস্তান। কেন? অপরিকল্পিতভাবে দেশের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিটি কর্পোরেশন শহরের সৌন্দর্যের তোয়াক্কা না করে বানিয়ে রেখেছে থার্ডক্লাস কিছু বৃহৎ মার্কেট। মার্কেটের ভবনগুলো দানবীয়। কিন্তু নেই কোনো শিল্পের বা পরিকল্পনার ছোঁয়া। বিশ্রি দেখতে মার্কেটগুলো বানিয়ে ছবিতে দেখানো প্রশস্ত রাস্তা ও পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থানগুলিকে যেন কংক্রিটের বস্তিতে পরিণত করা হয়েছে। একপাশে মুরগির বাজার, সুন্দরবন মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যুগ যুগ ধরে অর্ধেক বানিয়ে ফেলে রাখা মার্কেট ভবন।
পুরো এলাকায় সৃষ্টি করা হয়েছে ভয়ঙ্কর যানজট। এর কারণও আছে। এসব সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটে ৫০-৬০ বর্গফুটের দোকান নিয়ে করা হয়েছে কোটি টাকার বাণিজ্য। এমনকি ফুটপাথেও ৪-৫ ফুটের প্রশস্ত ছোট ছোট পানের দোকান সাইজ দোকান বানিয়েও কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। এগুলার নেই কোনো এস্থেটিক ভ্যালু বরং শহরের বস্তি বানিয়ে মতিঝিলের এক্সেস পয়েন্টগুলো বাধাগ্রস্ত করে দিয়েছে। দেশের জাতীয় মসজিদ সাভাবিকভাবে হবার কথা দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা হিসাবে। সেই মসজিদের বাইরে ও নীচ তলায় মার্কেট বানিয়ে অবস্থাটা এমন করা হয়েছে যে এখানে রাস্তায় দাড়ালে সহজে মসজিদ কারো চোখে না পড়লেও মার্কেট চোখে পড়তে বাধ্য। এর সঙ্গে আরও শুরু করা হলো রাস্তায় ভাসমান জুতার দোকান। লিটারালি পুরো রাস্তাজুড়েই। ফুটপাথ পরিণত করা হলো বাজারের এক্সটেনশন হিসাবে। এখানে কোনো ফুটপাথ নেই। মার্কেটের ভেতরের দোকানদারগুলোও লোক ভাড়া করে তাদের পণ্য কাউকে দিয়ে চাঁদা দিয়ে রাস্তায় বিক্রি শুরু করলো।
মতিঝিলের জৌলুস শেষ। এরপর হলো গুলশান। সেটাও শেষের দিকে। সামনে পূর্বাচল হবে এলিট স্থান। কিন্তু এলিট করে বানালেই তো আর এলিট হয়ে যায় না। ব্যবস্থাপনা ঠিক না রাখলেও সেটিও একসময় গুলিস্তান হওয়া অসম্ভব না। গুলিস্তানের পাশে আগুন লাগলো। মানুষগুলো পুড়ে মরলো। ঝলসে গেল। এখানে তড়িৎ উদ্ধারকাজ করার সুযোগ তো আগেই নষ্ট করে রাখা হয়েছে এসব উদ্ভট স্থাপনার মাধ্যমে। পুরান ঢাকায় যদি আগুন লাগে তবে অধিকাংশ স্থানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকবার মতো চওড়া রাস্তা নেই।
অথচ ফায়ার সার্ভিসের হেড অফিস পুরান ঢাকাতেই। লাভ নেই। একটা দেশের রাজধানীতে এভাবে চলতে দিলে কী হবে ভবিষ্যতে সেটা ভাবলেও ভয় হয়। তুরস্কের ভ‚মিকম্পের সময় একটি লেখায় বলেছিলাম যে এখানের সব ভবন ভেঙে নতুন করে গড়তে হবে। অন্য দেশে যেমন ভ‚মির মালিকানা থাকে সরকারের হাতে এখানেও সেরকম কিছু জরুরি। জেনে বুঝে স্বেচ্ছা আত্মহননের জন্য এই রাজধানীতে অপেক্ষা করছে কোটি মানুষ। সিটি কর্পোরেশনকে কেন মার্কেট বানিয়ে ব্যবসায় নামতে হবে? জাতীয় মসজিদের সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়ে কেন বাজার বানাতে হবে? স্টেডিয়ামের মতো স্থাপনায় কেন হকারি মার্কেটে রূপ দিতে হবে? এগুলার উত্তর জানা নেই। ফেসবুক থেকে
