ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা ডাকাতি আরও ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেপ্তার ৩
মাসুদ আলম : রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ডাকাতি ঘটনায় আরও ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ। একইসঙ্গে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত আরও তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মূল পরিকল্পনাকারী আকাশ, মিলন মিয়া ও মো. হৃদয়।
সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহাখালী কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকা, নেত্রকোনা ও খুলনা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার দিন ৯ মার্চ ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১১ মার্চ রাতে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধারসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তারসহ উদ্ধার করা হয়েছে ৭ কোটি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, মূল পরিকল্পনা ও ডাকাতি বাস্তবায়নে কাজ করেছে ৪/৫ জন। এ ঘটনায় মূল মাস্টারমাইন্ড আকাশ ও সোহেল রানা নামে দু’জন। এদের মধ্যে সোহেল রানা পলাতক। তিনি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কে একসময় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার রাতে কড়াইল বস্তির বউ বাজার এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয় । তার কাছ থেকে ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনার দূর্গাপুর এলাকার থেকে মঙ্গলবার সকালে মিলন নামে আরেক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ডাকাতির ঘটনার সময় ডাকাতদলে ছিল ১০/১২ জন। যখন মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের গাড়ি থেকে ট্রাঙ্কগুলোর স্থানান্তর করে ডাকাতদের ভাড়া করা হায়েস গাড়িতে তোলা হয় তখন একজন উঠতে না পেরে দৌড়াতে থাকেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই আকাশ সেই ব্যক্তি।
আগে গ্রেপ্তার হওয়া ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, ডাকাতির ঘটনায় কয়েক স্তরের বিভিন্নজনের আলাদা দায়িত্ব ছিল। কেউ ছিলেন পরিকল্পনাকারী, কেউ ছিলেন মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ ছিলেন কামলা ও কামলা সংগ্রহকারী। ডাকাতির পরিকল্পনা বিষয়টি সোহেল রানা মিলনের সঙ্গে শেয়ার করে। মিলন জানায় সানোয়ারকে। সানোয়ার দায়িত্ব নেয় কামলা (ডাকাত) সংগ্রহের। যাদের নামে একাধিক মামলা আছে ও বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে একজন (আগে গ্রেপ্তার) এনামুল হক বাদশা। যার নামে রয়েছে ২৭টি ডাকাতির মামলা। নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ থেকে এরকম ৯ জনকে হায়ার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দায়িত্ব হচ্ছে ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য ওখান থেকে মোবাইল ও সিম কিনে নিয়ে আসবে।
ডিবি প্রধান বলেন, সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে পরে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ২ দিন আগে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়। আকাশ ও সোহেল ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে মিলন ও সানোয়ারের কাছে। তারা জানায় যে, তারা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবে এবং সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে উঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ডাকাতির পর আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারণা করে যে, আকাশ ধরা পড়ে গেছে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিটে ফেলে দেয়। তাই তারা ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়া করে। পরে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মতো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের দেশের বিভিন্ন জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল থেকে সংগ্রহ করা হয়। ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মতো বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও লুটের টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।