পরিকল্পিত উদ্যোগে পাহাড়ের অনাবাদি জমিতে হতে পারে উচ্চমূল্যের দারুচিনি
মতিনুজ্জামান মিটু: বাংলাদেশের আবহাওয়া চাষের উপযুক্ত হলেও আমদানিতে মেটান হয় গরম মসলার অন্যতম উপাদান দারুচিনির চাহিদা। ২০২২ সালে আমদানি করতে হয় ১৫৩১৯.৩৯৬০ টন দারুচিনি। আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ মিস্ত্রি জানান; চির সবুজ মাঝারি আকারের ঝোপালো শাখাযুক্ত দারুচিনি গাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। দারুচিনির আদি নিবাস শ্রীলংকা। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ ভালও মানের দারুচিনি শ্রীলংকায় উৎপন্ন হয়। ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়, ওয়েস্টইন্ডিজ, দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বর্তমানে সাফল্যের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে দারুচিনির চাষ হচ্ছে।
পার্বত্য অঞ্চলে দারুচিনি চাষের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে এই কৃষিবিদ জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়াও দারুচিনি চাষের জন্য উপযুক্ত। দেশের সর্বত্র বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার অম্লধর্মী মাটি সমৃদ্ধ পাহাড়ের পতিত ঢালে খুব সহজেই দারুচিনির বাণিজ্যিক বাগান করা যেতে পারে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের মোট আয়তন ১৩,২৯,৫০০ হেক্টর বা ১৩,২৮১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনে বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ হলেও ভূপ্রকৃতিগত কারণে এঅঞ্চলের আবাদি জমির পরিমাণ ১৮১৫৯৪ হেক্টর। যামোট আয়তনের ১৪শতাংশ। পার্বত্য অঞ্চলে আবাদযোগ্য অনাবাদি জমি প্রায় ৩৭০৮৪ হেক্টর। এসব আবাদযোগ্য অনাবাদি জমিতে পরিকল্পিতভাবে দারুচিনির বাগান গড়ে উঠতে পারে।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে তিনি জানান, বাঙালির রান্নার বিভিন্ন বাহারি মসলার মধ্যে অন্যতম মসলা হচ্ছে গরম মসলা। আর গরম মসলার অন্যতম উপাদান হলও দারুচিনি। বিশেষ সুগন্ধ ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত দারুচিনি যে কোন মাংস রান্নায় অপরিহার্য। মসলা হিসেবে দারুচিনির ব্যবহার সুপ্রাচীন। মসলা হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি দারুচিনির রয়েছে ভেষজ ও ঔষধি গুণ। দারুচিনির বাকলে থাকে ‘সিনামালডিহাইড’ যা এর সুঘ্রাণ সৃষ্টি করে। আর পাতায় থাকে ‘ইউজিনল’। এছাড়া এতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মিনারেল ও ভিটামিন। দারুচিনি গাছের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ যেমন- বাকল, পাতা, কুঁড়ি, ফুল, ফল ও শেকড় কোন না কোন কাজে লাগে। এর বাকল উত্তেজক ক্ষুধাবর্ধক এবং বমি নিবারক। পেটের অসুখ, হার্টের দুর্বলতা, অর্শ, আমবাত, কফ সারতে সাহায্য করে। পাতার তেল সুগন্ধি তৈরিতে ও কৃত্রিম ভ্যানিলা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মদের স্বাদ ও সুগন্ধ বৃদ্ধিতে, ওষুধ শিল্পে, সাবান ও দাঁতের মাজন তৈরিতে, চকোলেট কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পে দারুচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সারা বিশ্বে দারুচিনির বেশ কয়েকটি জাত চাষ হয়ে থাকে। এদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সিনোল বা প্রকৃত দারুচিনি এবং জংলী বা ঝুটা দারুচিনি। প্রকৃত দারুচিনি বাদমি রঙের, অধিক সুঘ্রাণযুক্ত, পাতলা, মসৃণ, বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি। শ্রীলংকায় প্রকৃত দারুচিনির উৎপাদন বেশি হয়। আর জংলী দারুচিনির মধ্যে চীনা, সায়গন, ইন্দোনেশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, ভারতীয় প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সারাদেশে চাষযোগ্য দারুচিনির একটি জাত অবমুক্ত করে। যা বারি দারুচিনি-১ নামে পরিচিত। এজাতটির বাকলে অতি মাত্রায় সুঘ্রাণযুক্ত উদ্বায়ী তেল রয়েছে এবং জিংক সমৃদ্ধ। খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল। আর হেক্টর প্রতি ৩৮৫ কেজি বাকল পাওয়া যেতে পারে।
কষ্ট সহিষ্ণু এ গাছ যেকোনও লাল এবং বেলে মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁআশ মাটিতে চাষ করলে গাছের বাকলের গুণগতমান বাড়ে। দারুচিনি আর্দ্র ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালও হয় কিন্তু একটানা খরা সহ্য করতে পারে না। এক হাজার মিটার উঁচু পাহাড় ও টিলা