
ব্যবসায় পাবলিসিটি এবং আদানি কোম্পনির শেয়ার

কাজী এম মুর্শেদ
ব্যবসায় পাবলিসিটি বড় ব্যাপার। নেগেটিভ পাবলিসিটি কী করতে পারে, সেটা হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট আর আদানি দেখেন, এর থেকে শিখেন। নেগেটিভ পাবলিসিটি মানেই কিন্তু লস করা না। একটা কথা বলে রাখি, অনেকসময় ব্যবসা বড় স্টেকের খেলাও হয়, আমরা যা জানি বা দেখি, ঘটনা প্রায়ই তার বাইরে অন্য কিছু। আরেকবার উদাহরণ দিয়ে এই কথা বোঝানোর চেষ্টা করি। আপনারা সেটাই দেখেন যা দেখানো হয়, কিন্তু এর বাইরে গিয়ে চিন্তা করেন, অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট দেখেন। দুই বছর ধরে একটা কোম্পানির পেছনে যা ইনভেস্ট করেছে, তার ফল পাবে। আদানির শেয়ারে ধস নামিয়েছে যেখানে আদানির ফিজিক্যাল এসেট অনেক বড়। লাভ কার হয়েছে? মূলত হিন্ডেনবার্গ বড় অর্থ কামাবে। কারণ তারা শর্ট সেলার। আদানিরও লাভ আসবে, ইনফ্যাক্ট আসা শুরু করেছে, আবার বাজার ওঠা শুরু করেছে।
আপনারা এতদিনে জানেন শর্ট সেলার মানে কী, তারপরও বোঝার সুবিধার জন্য বলছি। ধরেন শেয়ারের দাম ১০ টাকা। এই দামে শর্ট সেলার বা শর্টটার্ম সেলাররা কারো কাছ থেকে শেয়ার ধার নেয়। মনে করেন ১০০টা শেয়ার নিলো এবং ৬ মাস পরে ১০ শতাংশ হারে ফি দেবে। পুরো শেয়ার ধারে কেনা, ফেরত দেবার সময় ১০ শতাংশ হারে ৬ মাসের ফি দেবে।
প্রথম কাজ এই ১০০ শেয়ার বেচে দেওয়া, এতে হাতে আসবে ১০০০ টাকা। এবার অপেক্ষা করা কখন শেয়ারের দাম কমবে। হিন্ডেনবার্গ দুই বছর ধরে রিসার্চ করেছিলো, সেটা রিপোর্ট পাবলিশ করার সাথে সাথে বাজার পরে যায়। মনে করেন শেয়ারের দাম ৪ টাকায় নেমে আসলো। এখন ১০০০ টাকা দিয়ে ২৫০ শেয়ার কিনে নেবে। এটাই আসল খেলা। যার কাছ থেকে শেয়ার ধার নিয়েছে, সে জানে তার সার্ভিস চার্জ পাবে, শেয়ারও ফেরত পাবে।
কিছুদিনের মধ্যে শেয়ারবাজারে অনেকেই টাকা হারাবে, কিন্তু বড় প্লেয়ার, শর্ট সেলার এবং কোম্পানি ধরে বসে থাকবে। একটা সময়ে আবার আগের জায়গায় যাবে। তখন ১০০ শেয়ার ফেরত দিয়ে ১০ শতাংশ হারে ফি দিয়ে দেবে, হাতে আছে ১৫০ শেয়ার। এই শেয়ার বেচলে লাভ, ধরে রাখলেও লাভ। ধরলাম বিক্রি করে দিয়েছে, লাভ ১৫০০ টাকা, ইনভেস্টমেন্ট প্রায় শূন্য, খরচ ১০০০ টাকার ১০ শতাংশ ছয় মাসে মানে ৫০ টাকা। এবার বলেন, শর্ট সেলার অপশন কেমন? এটা রিস্কের কারণ যদি শেয়ার দাম ঠিক সময় না কমে, আবার না বাড়ে। তবে সেইসব কোম্পানি টার্গেট করা হয় যাদের ফিক্সড এসেট যথেষ্ট বেশি। রিলায়েন্স বা টাটা বা আদানির মতো কোম্পানি। তবে আদানি সহজ টার্গেট। কারণ তাদের শেয়ার অন্যদের চেয়ে বেশি পরে, রিলায়েন্স বা টাটার শেয়ার অনেক স্টেবল, ১০ টাকা থেকে ৮ টাকা হতে পারে, কিন্তু আদানির ৪ টাকা বা ২ টাকায় নামতে পারে।
আদানির শেয়ার বাউন্সব্যাক করছে, রিকভারিতে আছে। পয়সা বানাবে আদানি, যারা মাঝে কিছু বোনাস ও অতিরিক্ত শেয়ার ছেড়ে ধরে রেখেছে, হিন্ডেনবার্গের মতো শর্ট সেলাররা এবং শেয়ার পতনের পর দেখেছেন, এলআইসি (লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া) অনেক শেয়ার কিনেছিলো। বোঝার সুবিধার জন্য ১০০ শেয়ার ১০ টাকা বলেছি। যদি এটা ১ মিলিয়ন শেয়ার ১০ ডলার হিসাবে ধরেন, দাম কমে ৪ ডলারের বদলে ২ ডলার ধরেও দেখতে পারেন, তাহলে ব্যবসাটা বুঝতে পারবেন। ক্যালকুলেটর হাতের কাছে থাকলে হিসাব করে নিয়েন। লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক
