
সরকারি ব্যয় জিডিপি’র সাড়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায় অর্থ বিভাগ
সোহেল রহমান : দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় অনেক কম। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপি’র (মোট দেশজ উৎপাদন) ১৩ শতাংশ, সেখানে ভারত, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামে এই হার ছিল সংশ্লিষ্ট দেশের জিডিপি’র যথাক্রমে ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।
এদিকে বাজেট উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে সরকারি ব্যয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ শতাংশ কম হবে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল জিডিপি’র শতাংশ হিসেবে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এটি ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপি’র শতকরা হিসেবে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় বর্তমানে কিছু উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় কম। সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি’র শতাংশ হিসাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি এবং গুণগত ও মানসম্পন্ন সরকারি সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মৌলিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষেবা খাতসমূহে ব্যয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সরকারি ব্যয়ের আকার বৃদ্ধি এবং একই সাথে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, একদিকে সম্পদের স্বল্পতা ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আশানুরূপ আহরণ করতে না পারা এবং অন্যদিকে বিদেশী সাহায্য কাঙ্খিত হারে না আসার কারণে সরকারি ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট তৈরি করা গেলে চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়াতো ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সেটি করা সম্ভব হয়নি। শেষমেষ বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে জিডিপি’র শতাংশের হিসাবে বাজেটের আকার কমে যাওয়ার বিষয়ে সূত্র জানায়, বিশেষ করে গত দুই বছরে কোভিডজনিত কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে এক ধরণের স্থবিরতা দেখা দেয়। ফলে আয় ভালো না হবার কারণে সরকারের পক্ষে ব্যয়ও বেশি করা সম্ভব হয়নি।
অর্থ বিভাগ সূত্র মতে, উন্নত অর্থনীতিতে সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। এমতাবস্থায় সরকার ক্রমান্বয়ে জিডিপি’র শতাংশ হারে ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মধ্যমেয়াদে সরকারি ব্যয় আগামীতে জিডিপি’র সাড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর এ জন্য রাজস্ব বা আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
তবে অর্থ বিভাগ বলছে, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের ফলে জিডিপি’র শতাংশ হিসাবে সরকারি ব্যয়ের আকার বাড়ছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ের আকার জিডিপি’র ১৩ শতাংশ হলেও ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এটি ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থ বিভাগ ও আইএমএফ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২১ সালে বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি ব্যয় জিডিপি’র শতাংশ হিসাবে ২০ ভাগের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ফ্রান্সের ছিল ৫৭ শতাংশ, সুইডেনের ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার ৩৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ শতাংশ ৮ শতাংশ, চীনের ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও মালয়েশিয়ার ছিল ২২ দশমিক ৩ শতাংশ।
