
সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা

মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার এক সপ্তাহ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর ফের দরপতন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। পাশাপাশি বড় অঙ্কে কমে গেছে বাজার মূলধন। সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, গত বছর শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই খারাপ গেছে। চলতি বছরও ঘুরে ফিরে সেই পতনই দেখতে হচ্ছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা খুব সমস্যায় আছে। গত এক বছরে শেয়ারবাজার থেকে লাভ করা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই লোকসান করেছেন মনে করেন বাজার সংশ্লিস্টরা।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমে গেছে। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমার সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫০৮ কোটি ২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৩৮ কোটি ২২ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৫৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ৫৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বা ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মোট লেনদেন কমার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়। এদিকে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪১টির। আর ২২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৮ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৪ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ২১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১০ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৮ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৫ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচক ও বাছাই করা সূচকের পাশাপাশি কমেছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৭ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১১ শতাংশ।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৫ কোটি ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিস শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ ৩ হাজার টাকা। ১১৪ কোটি ৫ লাখ ১ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, আমরা নেটওয়ার্ক, বিডিকম অনলাইন, ইস্টার্ন হাউজিং এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
দেশের অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেনে ছিল একই চিত্র। গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক ৯৮ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ৩৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩১৮ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৩ কোটি ৮ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৯ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৮টির, কমেছে ৮৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
