রমজান সামনে রেখে ভোক্তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই : বাণিজ্যমন্ত্রী
সোহেল রহমান: ‘বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলাসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মজুত রয়েছে’ দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেছেন, ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদার দেড়গুন মজুত আছে। এছাড়া পাইপলাইনেও আছে। রমজানে কোন পণ্যের ঘাটতি বা দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় একসঙ্গে বেশি পণ্য ক্রয় করে বাজারে চাপ সৃষ্টি করার কোন প্রয়োজন নেই। তবে কয়েক বছর পর রমজান উন্মুক্তভাবে হচ্ছে, এবার ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। যে কারণে দাম একটু বাড়তে পারে, সমস্যা হওয়ার কথা না। উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও ভোক্তা সমন্বিতভাবে সততার সঙ্গে দায়িত্বশীল কাজ করলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
তিনি বলেন, অন্যদিকে রমজানকে সামনে রেখে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে। কেউ কৃত্রিম উপায়ে কোন পণ্যের অবৈধ মজুত করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদেরও সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রেখে ভোক্তাকে স্বস্তি প্রদান করতে পারে। ব্যবসায়ীদের বলেছি, আমরা আবার রমজানের পর আপনাদের নিয়ে বসবো। এ সময়টায় আর কোনো অবস্থাতেই পণ্যের দাম বাড়াবেন না। এ বিষয়টি ব্যবসায়ীরা সম্মত হয়েছেন। ব্যবসায়ীরা নিজে থেকে একটা কথা বলেছেন যে, মিলগেটে তারা যে দাম দেন, তার থেকে ৫-৬ টাকা প্রফিট করে দোকানে বিক্রি করেন। সেটা চলবেই। তবে তারা নিজ উদ্যোগে ঢাকার পাশাপাশি প্রধান শহরে মিলগেটের প্রাইসে ট্রাক সেল করবেন।
প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, টিসিবি’র মাধ্যমে দেশের কার্ডধারী ১ কোটি নি¤œআয়ের পরিবারের কাছে রমজান উপলক্ষে দুই কিস্তিতে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রয় করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে দেশের প্রায় ৫ কোটি নি¤œআয়ের মানুষ উপকৃত হবে। আশা করা যায়, এর প্রভাব বাজারে পড়বে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ভর্তুকি মূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রিতে বছরে প্রায় ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
রোববার সচিবালয়ে ‘দ্রব্য মূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স-এর ৬ষ্ঠ সভা’ শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চিনি যথেষ্ট পরিমাণে আছে। মানুষের মনে ভয় লেগে আছে চিনি নেই। চিনি কিন্তু পাইপলাইনেও প্রচুর আছে। ফলে চিনি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। চিনিতে শুল্ক ছাড় দেয়ার কারণে কেজিতে সাড়ে চার টাকার মতো ছাড় পাওয়া যাবে। আমরা ব্যবসায়ীদের চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমানোর অনুরোধ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আশাকরি রোজার প্রথম সপ্তাহেই চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমবে। সোমবার থেকে মনিটরিং করতে শুরু করবো। নতুন ট্যারিফে পণ্য ছাড় করতে শুরু করেছেন কি না। যদি না করে তাহলে আমরা বলবো তিনদিনের মধ্যে করতে হবে। সেটা তাদের অনুসরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ যথেষ্ট পরিমাণ আছে। ভারত থেকে আমদানিও ¯েøা (ধীরগতি) করে দিয়েছি। যাতে করে আমাদের কৃষকরা দাম পায়। ভোক্তারাও যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে। তবে আমরা নিবিড়ভাবে বাজার মূল্যায়ন করবো। যদি দেখি দাম বাড়া শুরু করেছে, তাহলে আমদানিতে যে বিধি-নিষেধ করে দেয়া আছে, সেটা উঠিয়ে দেবো। কোনো অবস্থাতেই সমস্যা হওয়ার কথা না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যান্যের মধ্যে বাজারে মুরগির সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুরগীর মূল্য ঠিক করে দেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারা যদি ঠিক করে দেন মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ বা ১৪০ টাকা এবং এটার প্রকৃত মূল্য হচ্ছে ১৭০ টাকা, এটা যদি তারা ঠিক করে দেন, তাহলে আমাদের ভোক্তা অধিকার সে মূল্যেই তাদের ধরবে। তাহলে আমরা এ বিষয়টি ঠিক করতে পারবো। যেহেতু আমাদের কোনো ধারণা নেই এই বিষয়ে। এ জন্য তারাই মূল্য ঠিক করে দেবে।
তিনি বলেন, এছাড়া রমজানে শাকসবজির গাড়িতে যাতে চাঁদাবাজি না হয়, তা শক্তভাবে মনিটর করতে বলা হয়েছে। সচিবকে বলেছি, ডিসি পর্যায়ে সরাসরি বলে দিতে মহাসড়কগুলো দিয়ে খাদ্যসামগ্রী, শাকসবজি নিয়ে আসা যায়। এসব ট্রাক যাতে কোথাও না থামায়। কোনো অবস্থায় চাঁদাবাজি করতে দেয়া যাবে না। তাদের চলাচল মসৃণ করে দিতে হবে। সবগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।