শান্তি নিকেতন ঘুরে এসে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, দেশের কৃষির উন্নয়নে তিনি রবীন্দ্রনাথকেই পাথেয় করেছেন
বিশ্বজিৎ দত্ত: একদা আমেরিকার এক মন্ত্রী বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে তামাশা করেছিলেন, জাতীসংঘ তাকেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে ‘অনুকরণীয় দেশ’ হিসাবে তুলে ধরছে। সেই বাংলাদেশ এ বার খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলেছেন,কৃষিমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর দাবি, দেশের চাহিদা মিটিয়ে কৃষিজ সামগ্রী এখন রফতানির বাজার দখলের লড়াইয়ে নেমেছে। আর এই লড়াই ও উন্নয়নে রবীন্দ্রনাথকেই তিনি পাথেয় করেছেন।সম্প্রতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগ ঘুরেএসেছেন কৃষিমন্ত্রী, সেখানে তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ বাংলার কৃষিক্ষেত্রের উন্নতির জন্য যে গভীর চিন্তাভাবনা করেছিলেন, তা অনেকে জানেনই না!’রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনা সময়ের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে। আজ আমরা যা ভাবছি তিনি তা অনেক আগেই চিন্তা করেছিলেন। যিনি নিজের ছেলেকে বিদেশে কৃষি বিজ্ঞানে পড়িয়েছেন। যাতে দেশে এসে বিশেষ করে বাংলাদেশে যাতে কৃষির উন্নতি হয়। তিনি কৃষকদের জন্য ব্যাংক সৃষ্টি করেছিলেন।
রাজ্জাক জানান, উন্নত দেশে বাংলাদেশের আনাজ ও ফলের ভাল চাহিদা। তবে রফতানির জন্য গুণমান ছাড়াও দরকার আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত চাষাবাদের অভ্যাস। সেটাই করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘জাপানে বাংলাদেশের আমের খুব কদর। কিন্তু গায়ে আঠার দাগ থাকা চলবে না। কী ভাবে আম পাড়লে দাগ এড়ানো যায়, তা কৃষকদের শেখানো হচ্ছে।” মন্ত্রীর দাবি, চাষে জৈব সার ব্যবহারে জোর দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রক। উন্নত কৃষি-যন্ত্র কেনায় মিলছে ৫০%-৭০% সরকারি ভর্তুকি। জোর দেওয়া হচ্ছে বিশ্ব মানের প্যাকেজিংয়েও। এ জন্য শ্যামনগরে তৈরি হয়েছে প্যাকেজিং হাউস। সেখান থেকে মোড়কবন্দি আনাজ ও ফল যাচ্ছে বিমানবন্দরে। পূর্বাচলে আরও একটির নির্মাণ শুরু হয়েছে দু’একর জায়গায়। পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশ ও ব্রিটেনে নিয়মিত আনাজ যাচ্ছে। এখন রপ্তানির আসল গন্তব্য ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের বাজার।সেখানে আগে থেকেই বাংলাদেশের সবজি ও মাছ রপ্তানি হয়।এর ক্রেতা প্রধানত প্রবাসীরা। এবারে সেই দেশের নাগরীকদের হাতেও তুলে দেয়া হবে বাংলাদেশের আনাজ ও ফল।
রাজ্জাক নিজে আমেরিকার পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা কৃষিবিজ্ঞানী। আমেরিকা ও জাপানের কৃষি প্রকৌশল নিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
দশকের পর দশক শরতের কাশফুল ফুটলেই বাংলাদেশের মধ্য থেকে উত্তরাঞ্চল জুড়ে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা যেত। একে বলা হত ‘মঙ্গা’ (মহেঙ্গা বা দুর্মূল্য)। রাজ্জাক জানান, এই সঙ্কটকে জয় করা গিয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণের যশোর, সাতক্ষীরা, বরিশাল, খুলনার উর্বর জমিতে উৎপন্ন শাক-আনাজ, ফলমূল এখন তাজা থাকতেই গোটা দেশে পৌঁছচ্ছে। ফলে চাষিদের সামনে যেমন বাজার উন্মুক্ত, তেমনই খাদ্যাভাব স্থায়ী ভাবে কাটছে। ডাল, পেঁয়াজ, সরষের মতো অত্যাবশ্যক যে সব আনাজ ও তৈলবীজে বাংলাদেশ রফতানি নির্ভর, তা চাষেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গবেষকেরা উচ্চফলনশীল উন্নত সরষে উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানী-মন্ত্রী জানান, তাঁর স্বপ্ন দেশের কৃষিক্ষেত্রকে বিশ্ব মানে উন্নীত করা।