সাধারণ মানুষের আয় কমলেও কোটিপতি আমানত বাড়ছে
মাসুদ মিয়া: দেশের সাধারণ মানুষের আয় কমলেও কোটিপতি আমানত বাড়ছে। দেশে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টিতে। গত দুই বছরে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার। কেবল ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানত ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। এসব হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা। এরমধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি হিসাবে। শুধু কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি।
এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর কোটি টাকার ওপরে এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ১৬৭টি। যেখানে জমার পরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির ১১ হাজার ৯৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে তিন হাজার ৮৪৫টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১৮৩৩টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ১৪৩টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৮৮৭টি আমানতকারীর হিসাব।
আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৭২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩১৫টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৫৭৭টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৭৬২টি। এসব হিসাবে দুই লাখ ২৯ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা জমা রয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি জমা হওয়া এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টি হিসাবে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের আয় যখন কমছে তখন কোটিপতি আমানত বাড়তে থাকা মানে একটি গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এটাই অর্থনৈতিক বৈষম্য।
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি।