এলএনজি কার্গো আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : দেশের ক্রমবর্ধমান জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপি থেকে এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এক কার্গোতে এলএনজির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩ দশমিক ৬৯ ডলার হিসেবে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ দেশীয় মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি’র মূল্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুনে বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘœ করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ অবস্থায়, স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির বর্ধিত ব্যয় নির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তারিখে এসআরও অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০.৫০ টাকা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়, যা ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। সে লক্ষ্যে দেশে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১২ কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য গত ফেব্রæয়ারি থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয় এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে এমএসপিএ-টি চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্তকৃত এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবারাহের জন্য ২০২৩ সালের এপ্রিলে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি ক্রয় করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ১ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এপ্রিলে স্পট মার্কেট থেকে আরও ১ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছে এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব আহŸান করে ই-মেইলে চিঠি পাঠানো হয়।
জানা যায়, গত ২০ মার্চ দরপ্রস্তাব পাঠানোর শেষ দিনে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে এবং ৫টি দরপ্রস্তাব রেসপন্সিভ হয়। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি এলপি প্রতি ইউনিটের দাম ১৩.৬৯ ডলার উল্লেখ করে সর্বনি¤œ দরদাতা হয়। দরপ্রস্তাবে দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিটের দাম ১৩.৯৭ ডলার উল্লেখ করে। এ অবস্থায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি এলপি ১ কার্গো সমপরিমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সরবরাহ করবে।