
কর্পোরেট করের হার আরও ২.৫ শতাংশ কমানোর আহŸান ডিসিসিআই সভাপতির
মো. আখতারুজ্জামান : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানীর মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানীর কর্পোরেট করের হার আরও ২.৫ শতাংশ কমানোর আহŸান জানান।
বুধবার ডিসিসিআই, দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে আয়োজিত লাইভ প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারিখাত অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজার হলে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও হা-মীম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কর ও মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংষ্কারসহ ব্যবসাবান্ধব অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার সাত্তার। খেলাপী ঋণ হ্রাসের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি এডিআরের প্রয়োগ, অর্থঋণ ও ব্যাংকিং কোম্পানী আইনের সংস্কার, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদহার ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়াও তিনি জ্বালানি নিরপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ, অবকাঠামো খাত ও জাতীয় লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষনে দীর্ঘমেয়াদী ফিন্যান্সিয়াল ম্যাপিং প্রবর্তনের আহŸান জানান। সেই সাথে এলডিসি উত্তর সময়ে নিজেদের প্রতিযোগীতা সক্ষমতা ধরে রাখতে রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চামড়া, পাট, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি সম্ভবনাময় খাতে আগামী বাজেটে বিশেষ সুবিধা প্রদানেরও দাবী জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ^বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃক ডলারের সুদ হার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে ফলে আমাদের রিজার্ভেও উপর তেমন প্রভাব পড়েনি, আশা প্রকাশ করেন আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। উপদেষ্টা বলেন, আগামী বাজাটে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের মানসিকতা বাড়ানোর আহŸান জানান। সালমান এফ রহমান বলেন, তৈরি পোষাক খাতের ন্যায় কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত সমূহে যথাযথ আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ কে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সালমান এফ রহমান, এমপি বলেন, আগামী বাজাটে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় রাখা, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবনতা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়সমূহের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বৈশি^ক ও স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের উচ্চাভীলাষী বাজেট প্রণয়নের সুযোগ নেই, তবে জনগনের খাদ্য নিরপত্তা নিশ্চিতকরনের বিষয়টিকে সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি বলেন, দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বেসরকারিখাতের সমন্বয় আরো বৃদ্ধি করা জরুরী। তিনি বলেন, জিপিডিতে করের অবদান বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই, তবে এলক্ষ্যে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরনে আরো মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে দ্রæততম সময়ে সকল সেবা চালুকরণের আহŸান জানান, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে।
সম্মানিত অতিথি’র বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে বৈশি^ক পরিস্থিতি, এলডিসি উত্তোরণ, স্থানীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানী বহুমুখীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন সাবির্ক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বেসরকারিখাতের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে কারণ এর সাথে উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারালে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে তিনি লাল ফিতার দৌরত্য কমানোর উপর জোরারোপ করেন।
