
রমজানে বিভিন্ন দেশে মূল্যছাড় বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর হিড়িক

মাসুদ মিয়া: রমজান মাস শুরুর আগেই বিভিন্ন দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে উল্ট দাম বাড়িয়ে নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এক সপ্তাহ আগে ও পরে দামের পার্থক্য বেশ। রমজানের ইফতারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় বেগুন ও ছোলা। এক সপ্তাহ ব্যবধানে বেগুনের দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে ৫০ টাকার বেগুন ১০০ টাকা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে কমানো হয়েছে জিনিসপত্রের দাম। সুপারমার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে চলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের ওপর বিশেষ মূল্যছাড়ের প্রতিযোগিতা। ছোলা, মুড়ি, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ রমজান মাসে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। সেগুলোর পর দেয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়।
গতকাল বিকেলে অফিস থেকে ফেরার পথে শান্তিনগর কাঁচাবাজারে যান বেসরকারি চাকরিজীবী সুমন। ২৮০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি কিনে বেগুন কিনতে যান। দাম শুনে তো অবাক তিনি, বিক্রেতা প্রতি কেজি বেগুনের দাম হাঁকছেন ১০০ টাকা।
সুমন বলেন, খবরে দেখেছি রোজা আসলে বিশ্বের বিভন্ন দেশে সবকিছুর দাম কমে। আমাদের দেশে উল্টোটা হয় সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম ২৮০ টাকা কেজিতে কিনলাম ব্রয়লার মুরগি। বেগুন কিনতে গিয়ে শুনি এর দামও ১০০ টাকায় ঠেকেছে। রমজান আসলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেন সবকিছুর দাম। প্রতি বছর রোজায় বেগুনের সর্বোচ্চ দাম হয়। ১০০ টাকা কেজি, রীতিমত যেন আগুন লেগেছে বেগুনের গায়ে।
সারাদিন রোজা শেষে ইফতারের সময় মানুষ ছোলা-বেগুনির স্বাদ নিতে চান। যুগ যুগ ধরে এমন রেওয়াজ চলে আসছে। রমজানের সময় দোকানগুলোতে ইফতারের পসরায় যেমন শোভা পায় ছোলা-বেগুনি, তেমনি প্রতিটি বাড়িতে ইফতারের আইটেমে থাকে বেগুনি, ছোলাসহ নানা মুখরোচক খাবার। তাই রোজার আগেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ছোলা, বেগুনসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বেগুনের কেজি গিয়ে ঠেকেছে ১০০ টাকায়। রমজানের শুরু থেকে এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে, ছোলার দাম চাওয়া হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। বেসনের দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে।
নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে বেগুনের। রাজধানীর মতিঝিল সবজি বিক্রেতারা বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, হঠাৎ বেগুনের দাম বাড়তি। দুই দিন আগে যে বেগুন বিক্রি করেছি ৬০ টাকায়, সেই বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। দু-এক দিনের মধ্যে বলতে গেলে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। আসলে আমাদের কোনো দোষ নেই, আমরা দাম বাড়াইনি। সব পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে।
বিক্রতারা বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) বেগুন কেনা পড়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। সেই বেগুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলে পোষাবে না। এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, সবধরনের ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। রমজান আসলে সারাদেশে বেগুনের চাহিদা বাড়ে। চাহিদার তুলনায় মাল কম আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। যার প্রভাব বাজারে পড়েছে। কাঁচামাল নিয়ে খুব বেশি নয়-ছয় করার সুযোগ থাকে না।
মিরপুর শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আশা বেসরকারী চাকরিজিবী মরিয়ম বেগম বলেন, রমজান এলেই সবকিছুর দাম বাড়ে। এটা যেন বৈধ করে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্রয়লার মুরগির এত দাম যে কিনতে পারলাম না। সবজির দামও বাড়তি। বেগুন তো নিতেই পারলাম না। সবকিছুর দাম আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
পাচভাই ঘাটলেন মুদি-দোকানি নাজমুল বলেন, আমরা প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি করছি ৯৫ টাকায়। তবে, অন্যান্য দোকানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। গত বছরের চেয়ে এবার দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা।
