
এলএনজি আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা সর্বশেষ ১৪ ডলার করে এলএনজি কিনছে সরকার

এস.ইসলাম জয় : দেশীয় উৎস থেকে আগামী কয়েক বছরে গ্যাস সরবরাহ খুব বেশি বৃদ্ধির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যেই প্রতিবছর গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। তাই চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তিনটি নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন ও এলএনজি আমদানির উৎস বাড়াতে কাজ করছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
তিনি বলেন, নতুন করে কোনো ক‚পে গ্যাস পাওয়া গেলেও তা সরবরাহ করতে অন্তত তিন বছর লাগবে। আর সমুদ্রে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হলে তা সরবরাহে ৮ থেকে ১০ বছর লাগতে পারে। এ জন্যই এলএনজি আমদানি দরকার। বিদেশে থেকে এলএনজি আমদানি করে আনার পর তা রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে হয়। এর জন্য দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে মহেশখালীতে। একটি করেছে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি ও আরেকটি সামিট গ্রæপ। এ দুই দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ সরবরাহ সক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট। যদিও গড়ে কখনোই ৮৫ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা হয়নি। এ সক্ষমতা আরও বাড়ানো নিয়ে কাজ করছে সরকার।
গত ২ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার। তিনি জানান, পায়রায় একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল করার বিষয়ে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এক মাসের মধ্যেই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। এ টার্মিনালের সক্ষমতা হবে দিনে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ঘনফুট। প্রথমে ৫০ কোটি ও পরে বাড়ানো হবে। আর মহেশখালীতে একটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণে সামিটের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু বিষয়ে মতানৈক্য দূর হলেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ টার্মিনাল থেকে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি সরবরাহ করা যাবে। তবে পায়রায় পাইপলাইন না থাকায় গ্যাস সরবরাহ পেতে তিন বছর লাগতে পারে। এর বাইরে মহেশখালীতে স্থলভাগের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। জমির বিষয়ে পিডিবির অনাপত্তি পেলেই এখানে প্রস্তুতি কাজ শুরু হবে। এটি প্রথমে ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতার করা হবে, পরে আরও ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতা যুক্ত হবে।-প্রথমআলো
টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি এলএনজি কেনার নতুন উৎস নিয়েও কাজ করছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮ সাল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি দুটি চুক্তি আছে পেট্রোবাংলার। বছরে ৫৬টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে তারা। চুক্তি অনুসারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে আনুপাতিক হারে এ দাম নির্ধারিত হয়। এতে করে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম চড়া হলেও তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যায় এ চুক্তি অনুসারে। এখন নতুন করে দুই দেশের সঙ্গে আলাদা করে দুটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। শিগগিরই ওমানের সঙ্গে অনুস্বাক্ষর হতে পারে। এরপর কাতারের সঙ্গে চুক্তি হবে। তবে এ দুই দেশ থেকে নতুন করে কী পরিমাণ এলএনজি আসবে, কত দাম হবে; তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির বাইরে খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে নিয়মিত এলএনজি কিনে সরকার। গত বছর বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজার থেকে আমদানি বন্ধ করা হয়। টানা সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত ফেব্রæয়ারি থেকে আমদানি শুরু হয়েছে। জুন পর্যন্ত ১২টি কার্গো আমদানি করা হবে। সর্বশেষ ১৪ ডলার করে এলএনজি কিনছে সরকার। গত বছর এটি প্রায় ৭০ ডলারে উঠেছিল।
গত বছর দেশের স্থলভাগে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি ক‚প খননের পরিকল্পনা নেয় পেট্রোবাংলা। এটি এখন ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬টি ক‚পের উন্নয়ন প্রকল্প করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২৮টি করতে পারবে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স। বাকি ক‚পগুলোর কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে করানো হবে। বেসরকারি খাতে গ্যাস আমদানি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলা জানায়, দেশে এখন দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে আসে ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুট। আর বাকিটা এলএনজি আমদানি করে মেটানো হয়। ২০৩০ সালে দিনে গ্যাসের চাহিদা হবে ৫৬০ কোটি ঘনফুট। এর কতটা আমদানি করে মেটানো হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পেট্রোবাংলা।
