
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অবসরে পাঠানোর সুপারিশ সিপিডির

বিশ্বজিৎ দত্ত : দ্রæত বিদ্যুৎপ্রাপ্তির সংশোধিত আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফলর পলিসি ডায়ালগ। গতকাল নবায়নযোগ্য জ্বালানির ড্রাফট পলিসির উপর এক আলোচনায় এই দাবি করেন, ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, এই আইনের কারণে জ্বালানিখাতের কোন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সরকার কোথায় কার সঙ্গে কি শর্তে চুক্তি করছে। এটি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় না ক্ষতিকর কিছুই জানা যাচ্ছে না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ সবচেয়ে শস্তা হওয়ার কথা কিন্তু এখন যেসব তথ্য বের হয়ে আসছে তাতে তো দেখা যাচ্ছে মাথা খারাপ হওয়ার মতো দাম। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দামও ১৬ টাকায় ইউনিট।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে এখননি অবসরে পাঠিয়ে দিয়ে নবায়ন যোগ্য বিদ্যুতে আমাদের যেতে হবে। এটি করলে দেশের কোন ক্ষতি হবে না। এই বিষয়ে সিপিডির একটি গবেষণা আছে। সেখানে দেখানো হয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র করলে আর্থিকভাবে ক্ষতিহবে না। বরংচ দীর্ঘ মেয়াদে লাভের সম্ভবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে বিশেষ পরিস্থিতিতে জ্বালানি খাতের জন্য দ্রæত বিদ্যুৎপ্রাপ্তি আইনটি করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে দেশে বিদ্যুতের এই পরিস্থিতি নেই। এখনতো আইনটি রয়েগেছে। এর অন্যতম কারন এই আইনের মাধ্যমে অনেক অনিয়ম আড়াল করা হচ্ছে। মানুষ জানতে পারছে না বিদ্যুতের চুক্তিগুলো সম্পর্কে।
ড. মোয়াজ্জেম আরো বলেন, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ি সরকার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে। কারণ আইএমএফ বিদ্যুতের ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা বলেছে।এখন মূল্যবৃদ্ধির দায়ভার ভোক্তার ঘারেই চাঁপিয়ে দেয়া হচ্ছে । সাধারণভাবে বলা হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কথা।মূলকারণ দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪৮ শতাংশ অব্যহ্রত থাকছে। এই অব্যবহ্রত বিদ্যুতের দাম দিতে হচ্ছে। এরফলে দেশে মূল্যস্ফীতিসহ জীবনযাত্রার মানে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে কুইক রেন্টাল থেকে বের হয়ে আসার কথা । এখন সরকারের হাতে সময় রয়েছে ৬ মাস। কিন্তু এরথেকে বের হয়ে আসার সরকারের কোন উদ্যোগ দখছিনা।
সিপিডির নিবন্ধে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল্যায়ণে বলা হয়, ২০০৮ সালে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল তার চেয়ে ২০২২ সালের খসড়াটি বেশ গোঁছানো। সেখানে ২০২৫ সালেই মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলা হয়েছে। ২০৪১ সালে এর উৎপাদন ধরা হয়েছে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ।
নিবন্ধে ভারত ও ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, এইখাতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে সুযোগ দেয়া হয় নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতেও তেমন সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। নিবন্ধে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়, এনার্জি পার্কস্থাপনে। এ বিষয়ে ড. মোয়াজ্জেম বলেন, ভারত ও ভিয়েতনামের বিস্তির্ন জমি রয়েছে। এরজন্য তারা বড় ধরণের এনার্জি পার্কস্থাপনের উধ্যোগ নিতে পেরেছে। কিন্তু আমাদেরও এই ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এতে বিনিয়োগকারীরা একজায়গা থেকে সহজে জাতীয়গ্রীডে বিদ্যুৎ দিতে পারবে। তিনি বলেন, কথায় কথায় আমরা ভারত বা বিয়েতনামের তুলনা এনে কথা বলি, এখন সময় এসেছে ভারত ও ভিয়েতনাম নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে সেসবের সঙ্গেও যেন আমাদের তুলনা করা হয়।
