মাছ মাংস ছাড়াই খাবার ব্যয় বেড়েছে ১৪৪৩ টাকা খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাজেহাল মানুষ: সিপিডি
বিশ্বজিৎ দত্ত : খাদ্য তালিকা থেকে মাছ আর মাংস বাদ দিয়েওএকটি পরিবারের মাসিক খাবার খরচ বেড়েছে ১৪৪৩ টাকা।এই হিসাব সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিডি)। গতকাল ২০২৩-২৪ সালের বাজেট সুপারিশে সিপিডি এই তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও আগামী বাজেটের জন্য তারা বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। তারমধ্যে মূল্যস্ফীতি, দেশের ব্যাংকিং, রাজস্ব, মজুরি কাঠামো, সর্বোপরি দেশের সামষ্ঠিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার চিত্র রয়েছে। বাজেটে যাতে সরকার এই সমস্যাগুলো বিচেনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে তার জন্য এই সুপারিশ বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি জানান, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে ঝড় ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই ঝড়ের কারণ শুধুমাত্র ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধই নয়। দেশের অভ্যন্তরেও সুশাসন ও অদক্ষতার কারণে ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।আর এই অদক্ষতার কারনেই দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
সিপিডি ওয়ার্ল্ডব্যাংকের নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকার তথ্য দিয়ে জানায় সারা বিশ্বেই নিত্যপণ্যের মূল্য কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এক বছরের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৩গুন। তারা ২৮টি পণ্যের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের তথ্য দিয়ে বলেন, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আগে ৪ জনের একটি পরিবারের মাসিক খাবার খরচ ছিল ১৮ হাজার টাকা এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। আর খাবার তালিকা থেকে মাছ মাংস বাদ দিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে একটি পরিবারের খাবার খরচ ছিল ৫৬৮৮ টাকা। এবছরের ফেব্রæয়ারিতে এই খরচ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭১৩২ টাকা।
সিপিডি জানায় আইএমএফ সরকারকে শর্ত দিয়েছে আগামী অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় করতে হবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সরকারের রাজস্ব আয়ের বর্তমান যেগতী তাতে আগামীতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। সিপিডি জানায় ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক আদায় কমেছে। এডিপি বাস্তবায়ন হার কম। বেশিরভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রমও কমেগেছে।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে তারল সংকট ক্রমাগত বাড়ছে। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো সামান্য তারল্য সংকটও সামাল দিতে পারছেনা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা।ড. ফাহমিদা এ বিষয়ে বলেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকগুলোকে ব্যাক্তিগত সম্পত্তিতে পরিনত করা হয়েছে। জনগণের করের টাকায় খেলাপী ঋণ পরিশোধ করে ব্যাংক টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। সিপিডি দেশের ব্যাংক ব্যাবস্থাকে উদ্ধারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করে।
সিপিডি দেশের রফতানি বৃদ্ধি, রেমিটেন্স বৃদ্ধিকে অর্থনীতির জন্য ভাল মনে করলেও এই সময়ে পোশাকের বাইরে অন্যপণ্যের রফতানি প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে বলে জানায়। আবার জনশক্তি রপ্তানির তুলনায় রেমিটেন্স কাঙ্খিত মাত্রায় না আশাও সুখবর নয় বলে মনে করে সিপিডি। দেশে বৈদেশিক সহায়তার পরিমান প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে বলেও মনে করে সিপিডি। সিপিডি জানায় শধুমাত্র ১ বছরে দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। মানুষের সঞ্চয় কমেছে বলেও জানায় সিপিডি। যারফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। এই ঋণ নেয়ার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে।
ভর্তুকির সমালোচনা করে সিপিডি জানায় আগামীতে রেমিটেন্সে ভর্তুকি রাখা উচিত হবে না। কারণ ভর্তুকি দেবার পরেও দেশে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পায়নি। কিন্তু এক বছরেরেমিটেন্স ভর্তুকি বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুতের ভর্তুকির সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদ ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদ্যুতের ভর্তুকি জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে সরকার। এই ভর্তুকি কারা নিচ্ছে তা সবাই জানে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে বাসিয়ে বসিয়ে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদককারীদের ভর্তুকি প্রদান বন্ধ করতে হবে। এরথেকে মুক্তি পেতে চাইলে সরকারকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে যেতে হবে।
সিপিডি আগামীতে রাজস্ব খাতের সংস্কার দাবি করে বলে ধনীদের করের সুবিধা দেয়া বন্ধ করতে হবে। গত বছরের বাজেটে ধনীদের করহারে সুবিধা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আয়কর বাড়েনি। তাই ব্যাক্তি শ্রেণীর করদাতাদের ন্যুন্যতম করসীমা সাড়ে ৩ লাখ করার করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।