দেশে কেউই বিজ্ঞানী, গবেষক বা দার্শনিক হতে চায় না
একেএমবাহার
বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম সাহেবের একটা উক্তি কিছুদিন আগে ফেইসবুক পেইজে পোস্ট দেখেছিলাম অধ্যাপক মনজুরুল ইসলামের” কথাটি হলো কোন বিজ্ঞানী নাই, গবেষক নাই, দার্শনিক নাই। যেদিকে তাকাবেন শুধুই প্রশাসক।” প্রেক্ষিত বাংলাদেশ।অধ্যাপক সাহেবের আরো কয়েকটি লেখায় আমি পড়েছি-শোনেছি, বলেছেন, প্রশাসক তৈরী বিশ্ববিদ্যালয় মূল উদ্দেশ্যের সাথে যায় না, লাইব্রেরীতে সবাই বিসিএসএস এর গাইড নিয়ে বসে বসে মুখস্ত করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মৌলিক উদ্দেশ্য সেখানে অনুপস্থিত, ইত্যাদি । এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বেশিরভাগই বিসিএস ক্যাডার হতে চায়, বিশেষ করে প্রশাসন, পররাষ্ট্র বা পুলিশ ক্যাডারে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ছাত্ররা মানুষ হওয়া বা জ্ঞানচর্চার চেয়ে বেশি মনোযোগী হয় বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দিকে। অবশ্য বিসিএস ক্যাডার হলে যে মানুষ হওয়া যাবে না বা জ্ঞান চর্চা করা যাবে না, সবক্ষেত্রেই সেটা সত্য না।এই ভ‚খন্ডের বেশিরভাগ মানুষ কেন প্রশাসক হতে চায়? কি তার কারণ? এর পেছনে কি ঐতিহাসিক বা জেনেটিক কোন কারণ আছে? নাকি সিস্টেমে পড়ে বা অন্য কারণে সবাই প্রশাসক হতে চায়।দর্শন, বিজ্ঞান, বা গবেষণায় কেন তাদের আগ্রহ এত কম? কি তার কারণ? এটা অনেক বড় দার্শনিক গবেষণার বিষয়। এর মধ্যে কিছু কারণ হতে পারে:এই অঞ্চলের মানুষরা গত কয়েক শতাব্দী ধরে অন্যের অধীনে থেকেছে বা পরাধীন হিসেবে দারিদ্রতার কষাঘাতে কোনমতে বেঁচে থেকেছে। মনের বা বিবেকের নৈতিকতা সেইভাবে চর্চিত হয়নি। তারা উপর থেকে যা দেখেছে, তাতেই বিশ্বাস স্থাপন করেছে। কারণ, তাদের চিন্তাশক্তির গভীরতা বিকশিত হয়নি।দারিদ্রক্লিষ্টতা চিন্তার প্রসারতা নষ্ট করে।পরববর্তীতে তারা নিজের দেখা ও শোনা অভিজ্ঞতা থেকে বোঝেছে, প্রশাসক হলে নিরাপত্তা পাওয়া পায়, আর্থিক নিরাপত্তা এবং শারিরিক নিরাপত্তা।মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে একটা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে এক নম্বরে, সেটা হলো নিজের জীবনের নিরাপত্তা এবং দুই নম্বরে বেঁচে থাকার জন্য খাবার এর নিশ্চয়তা।প্রশাসক হলে এক নম্বর এবং দুই নম্বর দুটিই ঠিকভাবে মিলে যায়। তাই সবাই প্রশাসক হতে চায়।কলোনিয়াল নিয়মে চালিত সব দেশের জন্যই এই কথা প্রযোজ্য। তবে কোনদিন হয়ত আসবে যেদিন এইসব কলোনিয়াল মানসিকতা আর নাগরিকদের মধ্যে থাকবে না। কিন্তু সেই দিনটা কত দিন পরে, সেটাই বিরাট প্রশ্ন।আর. দার্শনিক, গবেষক হতে হলে চিন্তার গভীরতা, কল্পনাশক্তির বিচ্ছুরণ থাকা দরকার এবং সেইটার জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরী থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক গবেষণা করবে? দর্শন চর্চা করবে? নাকি রাজনীতি করবে? রাজনীতি করলে অনেক সুবিধা (আর্থিক এবং প্রশাসনিক) পাওয়া যায়, কিন্তু গবেষণায় বা দর্শন চর্চায় সেই হালুয়া কখনও জোটবে না। এখন সিদ্ধান্ত নিজের।এরমধ্যে কেউ কেউ করে, তারা কখনও প্রশাসক হতে চায় না। ব্যাতিক্রম কখনও সাধারণ উদাহরণ হয় না।কেউ কেউ চাইলে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে পারে, মৌলিক গবেষণা হবে: কেন সবাই প্রশাসক হতে চায়: কেউ গবেষক, বিজ্ঞানী বা দার্শনিক হতে চায় না। ভাল টপিক, গবেষণার জন্য।