আব্দুল ওয়াদুদ : এটি দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র। কেন্দ্রটি মসলার বহুমুখী জাত উদ্ভাবনে তাক লাগিয়েছে। বগুড়া থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড়ের অদূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭০ একর জমির ওপর এই মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয় প্রায় ১৯৯৬ সালে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অধীনে এ গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত হয়।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র ও ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আঞ্চলিক মসলা কেন্দ্র মাগুরা কুমিল্লা ও গাজীপুরে। উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র লালমনিরহাট, ফরিদপুর, সিলেট ও খাগরাছড়িতে।
এ কেন্দ্র এ পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) নানা জাতের মসলা উদ্ভাবন করেছে। ৪৬ টি মসলা ফসল নিয়ে গবেষণা করে এ পর্যন্ত ৫১ টি জাত উদ্ভাবন করেছে এ গবেষণা কেন্দ্র। জাতগুলো হলো (পেঁয়াজের ৭টি, পাতা পেঁয়াজের ১টি, মরিচের ৪টি, অর্নামেন্টাল মরিচের ২টি, রসুনের ৪টি, আদার ৩টি, হলুদের ৫টি, ধনিয়ার ২টি, বিলাতি ধনিয়ার ১টি, কালোজিরার ১টি, মেথীর ৩টি, ফিরিঙ্গী ১টি, মৌরির ২টি, শলুক ১টি, রাধুনী ১টি, জাউন ১টি, একাঙ্গীর ১টি, চিভের ১টি, পুদিনা ২টি, আলুবোখারার ১টি, দারুচিনি ১টি, তেজপাতা ১টি, গোলমরিচের ১টি এবং পানের ৩টি, জিরা-১টি )। যা বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ হচ্ছে।
চলতি মসলার সঙ্গে গবেষণাধীন মসলাগুলো হলো : শলুক, তেজপাতা, রাঁধুনী, জোয়ান, ফিরিঙ্গি, চুঁইঝাল, একাঙ্গি, পিপুল, শঠি, দই রং, বচ, পুদিনা, পোলাও পাতা, লেমনগ্রাস, আম আদা, মিঠা তুলশি, পান সুপারি, জিরা, কাবাবচিনি, চিভস, অলস্পাইস, কারিপাতা, পান বিলাস, লবঙ্গ, পেস্তা, বাদাম, জয়ফল- জৈয়ত্রী ইত্যাদ।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ কে এম খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের একেক এলাকার মাটি একেক ধরনের মসলা উৎপাদনের জন্য উপযোগী। বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র যা উদ্ভাবন করছে তা মাঠ পর্যায়ের কৃষকের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি কেন্দ্রের গবেষণালব্ধ ফলাফল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বারি) নিয়মিত জানানো হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে মসলা আবাদ করে উৎপাদিত হচ্ছে অন্তত ৪৪.৯৬ লাখ টন।
মসলা গবেষণা কেন্দ্র বগুড়ার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জুলফিকার হায়দার প্রধান বলেন, মসলা প্রযুক্তি হস্তান্নতরসহ গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অঞ্চলের ৫ হাজার ৬ শ’জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ কেন্দ্রে বিশাল পরিসরে গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য কর্মরত বিজ্ঞানীর সংখ্যা অপ্রতুল। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ফেলোশিপ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সিরিয়াল ফুড ও ভেজিটেবল চাষের আধিক্যের কারণে মসলা চাষের জমির স্বল্পতা রয়েছে। এ কেন্দ্রটি এ পর্যন্ত যত জাত উদ্ভাবন করেছে মাঠ পর্যায়ে তার পৌঁছানোর দায়িত্ব কৃষি উন্নয়ন করপোরশেন হয়ে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের।