রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রোসাটম জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করবে রাশিয়া থেকে আকাশপথে আসবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানি
আজিজুর রহমান, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস: বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য বিমানে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহের জন্য প্রথম জ্বালানি বহনকারী রাশিয়ান কার্গো বিমানটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো ও রানওয়ে পরিদর্শন করতে স¤প্রতি রোসাটমের একদল বিশেষজ্ঞ ঢাকা সফর করেছেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা বিমানবন্দর থেকে আরএনপিপি নির্মাণস্থল পর্যন্ত রাস্তাগুলোও পরিদর্শন করেছেন যাতে এই বিষয়ে কোনও পরিবহন সমস্যা না হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রোসাটম জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করবে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত যথাক্রমে ডিসেম্বর ২০২২ এবং জানুয়ারি ২০২৩-এ একটি রাশিয়ান জাহাজ স্পার্টা ৩-এর ডকিংয়ের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছিল। জাহাজটি বাংলাদেশে নির্মাণ করা আরএনপিপির যন্ত্রপাতি বহন করছিল। বাংলাদেশও রাশিয়ান জাহাজের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে যোগ দিয়েছে এবং বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৬৯টি রাশিয়ান জাহাজকে তার বন্দরে নোঙ্গর নিষিদ্ধ করেছে।
একটি আন্তঃসরকারি কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ স¤প্রতি রাশিয়ার পণ্য বোঝাই জাহাজের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি রুশ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বাংলাদেশের যুক্তি হচ্ছে এটি বৈশ্বিক এবং ক‚টনৈতিক বিষয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠক আলোচনার প্ল্যাটফর্ম নয়। রোসাটম বলেছে, বাংলাদেশের রূপপুর প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ সমস্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নির্মাণস্থলে পৌঁছানো অব্যাহত রয়েছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে মোংলা বন্দরে আসে নির্মাণাধীন প্ল্যান্টের জন্য পণ্যবাহী তিনটি জাহাজ। রাশিয়ান কোম্পানিগুলো নির্মাণাধীন প্ল্যান্টের জন্য মূল সরঞ্জাম উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ফেব্রæয়ারিতে, রোসাটমের এইএম টেকনোলজিস পেট্রোজাভোডস্ক-ভিত্তিক উৎপাদন সুবিধা, ইউনিট ১ এবং ইউনিট ২ পারমাণবিক দ্বীপের পাইপিংয়ের জন্য মোট ১১৬টি শাট-অফ ভালভ তৈরি করেছে। এই ভারী ভালভগুলো ১২ মেগাপ্যাস্কাল পর্যন্ত চাপ এবং ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম। ভাল্ভগুলো বায়ুসংক্রান্ত, জলবাহী এবং ভ্যাকুয়াম চাপ পরীক্ষা সহ ফ্যাক্টরি ট্রায়ালগুলোর একটি সিরিজ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষার সময় এগুলো ১০ মিনিটের জন্য ১৮.৪ এমপিএ চাপ প্রয়োগ করা হয়। মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ভিভিইআর-১২০০ চুল্লি সহ দুটি পাওয়ার ইউনিটে নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
গত ফেব্রæয়ারিতে, ইউনিট ২-এর প্রাথমিক কুল্যান্ট পাইপে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। ২৮টি পাইপ জয়েন্টগুলিকে সারিবদ্ধ করতে, ওয়েল্ড করতে এবং তাপ-চিকিৎসা করতে ৬০ দিন সময় লেগেছিল। পাইপগুলোকে রক্ষা করতে অস্টেনিটিক স্টেইনলেস স্টিলের একটি স্তর জমা করতে আরও ছয় দিন সময় লাগে। প্রাথমিক কুল্যান্ট পাইপগুলো প্রাথমিক কুল্যান্ট সার্কিটের সমস্ত সিস্টেম এবং সরঞ্জামগুলোকে সংযুক্ত করে। সার্কিটটি চুল্লির সঙ্গে সংযুক্ত চারটি লুপ নিয়ে গঠিত, প্রতিটি লুপে একটি প্রাথমিক কুল্যান্ট পাম্প এবং একটি বাষ্প জেনারেটর রয়েছে। ২৩৮ মেট্রিক টন ওজনের, প্রাথমিক কুল্যান্ট সার্কিট ১৪০-মিটার দীর্ঘ। অনুবাদ: রাশিদুল ইসলাম