বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের শীর্ষপদে নারীদের অংশগ্রহণ কমছে?
কলাম সৈয়দ মনসুর হাশিম
ভাষান্তর : জাফর খান
স¤প্রতি ঞযব ঝঁংঃধরহধনষব ঞবীঃরষব ওহরঃরধঃরাব: ঞড়মবঃযবৎ ভড়ৎ ঈযধহমব (ঝঞওঞঈঐ) এর অর্থায়নে ও নেদারল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের সহযোগিতায় একটি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায়। ঞযব ঊঃযরপধষ ঞৎধফরহম ওহরঃরধঃরাব (ঊঞও), এওত ধহফ ইৎধপ টহরাবৎংরঃু উক্ত গবেষণাটি পরিচালিত করতে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত সৈয়দ মনসুর হাশিমের কলামে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প সম্পর্কে লেখা কলামে শীর্ষপদে নারীদের অবস্থান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এমন কিছু তথ্য, যা আমরা তুলে ধরছি।
‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে নারীকর্মীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। দেখা যায়, এই শিল্পটি নারী কর্মীদের উপর নির্ভরশীল হলেও কর্তৃত্ব পর্যায়ের বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা উল্লেখ যোগ্যহারে কমছে ক্রমশই। এমনকি ক্যারিয়ার হিসেবে এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে এমন নারীদের সংখ্যাও অত্যন্ত কম। প্রতিবেদনে প্রকাশ, এই শিল্পে মাত্র ১ শতাংশ নারী সুপারভাইজার পদে কাজ করছেন। অন্যদিকে মোট ৮৬ শতাংশ জনবলের মধ্যে ৬৬ শতাংশ নারী কাজ করছেন কর্মী হিসেবে। কারখানার ফ্লোরগুলোতে দেখা যায়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই নারী। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জন কর্মীর ভ‚মিকায় রয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মীদের হয়তো পেশাগত দক্ষতার দিক হতে একটু কম দক্ষ মনে করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্যের একটা নিষ্ঠুর চিত্রও দেখা যায়। নারীরা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে বা ব্যবস্থাপকীয় ভ‚মিকায় থাকবেন তা যেন সামাজিকভাবেই বেশ প্রতিবন্ধক। বেশির ভাগ পুরুষ কর্মীরাই তাদের সুপিরিয়র হিসেবে নারী কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ক্ষেত্রেই ধারণা করা হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অন্যান্য পেশাগত দক্ষতার দিক থেকে নারীরা পুরুষের সমকক্ষ নয়, যা কিনা নারী-পুরুষ বৈষম্যকে আরো প্রকট করে তুলছে ক্রমাগত।
১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ সদস্যসহ সরকারের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন নারীরা। এমনকি দেশ ও বিদেশে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্ব পর্যায়েও নারীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়াও ব্যাংকিং ও গুরুত্বপূর্ণ কর্পোরেট সেক্টরেও নারীদের অগ্রণী ভ‚মিকা থাকলেও এখনও উচ্চ দায়িত্বশীল পদে তাদেরকে যেন নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে পরোক্ষভাবে।
গবেষণা বলছে, নারীর দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে অক্ষম কারণ অফিসের বাইরে স্বামী, পরিবার, সন্তানদের ক্ষেত্রেও তাদের দিতে হয় প্রচুর সময়। একজন নারীকে বাইরের সঙ্গে ঘরকেও সামাল দিতে হয়। কিন্তু এর বাইরেও অনেক কারণেই তারা বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। আরেকটি মজার বিষয় হলো, অপারেটিভ স্তরে ওভারটাইমের ব্যবস্থা থাকলেও মধ্যস্তর বা উচ্চপদে নির্ধারিত বেতন কাঠামো বিদ্যমান নেই এমন সুযোগ। দেখা গেছে যখনই সুপিরিয়র বা সুপারভাইজার পদে নারীরা আসতে চেয়েছেন তখনই নানা অজুহাতের ভিড়ে এটি একটি অন্যতম কারণ।
একটি সত্য আমাদের মেনে নেওয়া উচিত কোনো দ্বিধা ছাড়াই তা হলো একজন নারী শুধু কর্মক্ষেত্রেই পারদর্শী তা কিন্তু নয়। একাধারে একজন নারীর রয়েছে অনেক ভ‚মিকা। নারী কোনো সাধারণ মানুষ নয়। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও পারদর্শী নানা কাজ সুনিপুনভাবে সম্পন্ন করতে। বিশ^াস হোক বা না হোক এটাই সত্য। একজন নারীকে মা, পরিবারের লালনকারী হিসেবে যেমন ভ‚মিকা রাখতে হয় কর্মজীবী নারী হিসেবেও তেমনই জীবিকা নির্বাহে রাখতে হয় দৃঢ় ভ‚মিকা।
আমাদের উচিত তাদের প্রতি সঠিক মূল্যায়ন ও সম্মান দেখানো। এমনও দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে একজন নারীর কাজের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে বেশি। অথচ আমরা দেখছি নানা বৈষম্য ও প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যদিয়ে তারা কাজ করে আসছেন। আমরা মনে করি, কারখানার নীতিনির্ধারক পর্যায়েই শুধু নয় গার্মেন্টস শিল্পসহ সকল প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও নারীদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গির বিশাল এক পরিবর্তন আনতে হবে। হয়তো একটা ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখব তাহলে। আর এমন এক সোনালী আশার আলো নিয়েই প্রতীক্ষায় রয়েছি যেখানে কিনা বৈষম্যহীন কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
সূত্র : ডেইলি ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস