মূল্যবৃদ্ধির তাপ কি রাজনীতিবিদদের গায়ে লাগে না!
খসরুল আলম : [২] আহমদ হোসেনÑসাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ : দেশে যে মূল্যস্ফীতি নেই, এইটা বলা চরম ভুল হবে। তবে মূল্যস্ফীতি শুধু আমাদের দেশে নয়, গোটা দুনিয়াজুড়ে মূল্যস্ফীতি চলছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো পৃথিবীতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আমেরিকাতেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানেও পণ্যের সাপ্লাই কম। বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২৯ শতাংশ কমেছে, ঠিক আছে। তবে আমাদের দেশে ২৯ শতাংশ দাম না কমলেও কমেছে ৮ শতাংশ, কারণ ইমপোর্ট খরচসহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে। যেমন ভারতে পেঁয়াজের যে দাম তা আমদানি করে বাংলাদেশে বিক্রয়ের সময় ভারত অপেক্ষা বেশি দাম হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ডের একটি বিষয় রয়েছে। আমাদের চাহিদা যখন বেশি এবং সাপ্লাই কিছুটা কম, তখন দাম কিছুটা স্বভাবতই বৃদ্ধি পাবে। দুনিয়াজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট আমাদের অর্থনীতিতেও পড়েছে।
[৩] সাধারণ মানুষ আরও কম মূল্যে পণ্য চায়, এটি ঠিক আছে এবং আমরাও সাধারণ মানুষের কষ্ট বুঝি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশা, এই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে সকলকে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এটি খুবই কষ্টকর। চাল, মুরগি, গরুর মাংস থেকে শুরু করে প্রায় জিনিসেরই দাম বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে সীমিত আয়ের মানুষ যে না খেয়ে আছে, অনাহারে আছে এমনও নয়। রিপোর্টে কেউ কেউ বলছে, তারা দীর্ঘ সময় মাংস না খেয়ে আছে, তবে এই সংখ্যাটা খুবই কম। মানুষের আয়-রোজগার স্বাভাবিক থাকার কারণে কম হলেও খেয়ে জীবনযাপন করছে। তাছাড়া টিসিবির মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে সরকার কম টাকায় বিভিন্ন পণ্য ক্রয়য়ের সুবিধা করে দিয়েছে।
[৪] জনগণের কষ্টটা সবসময় আওয়ামী লীগ সরকার বোঝে, স্পেশালি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব ভালো করে মানুষের কষ্ট বোঝেন। তিনি এইটা বোঝেন বলেই টিসিবির পণ্য দরিদ্র মানুষের জন্য কম দামে দিচ্ছেন। এমনকি ভর্তুকি দিয়ে জনগণকে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বাজারে গরু, খাসি জবাই হচ্ছে এবং বিক্রয়ও হচ্ছে। এগুলো তো আর পচে যাচ্ছে না। তার মানে মানুষের পকেটে টাকা আছে। মানুষের আয় খুব একটা না বাড়ার কারণে আগে এক কেজি মাংস-মাছ যারা ক্রয় করতো তারা এখন আধা কেজি ক্রয় করছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে থাকে, আমরা সরকারের পক্ষ হতে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে তা ঠিক করার চেষ্টা করে চলেছি। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম সবসময়ই ওঠা-নামা করে থাকে, এটাই স্বাভাবিক।
[৫] হাবিবুর রহমান হাবিবÑ চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, বিএনপি : বাজারে আমিও যাই এবং সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া শুনে থাকি। এগুলো যদি আহমদ হোসেন শুনতেন, তাহলে তিনি আর টেলিভিশনের সামনে বাজারদর নিয়ে কথা বলতেন না। উনি বললেন মানুষ তো না খেয়ে নেই। ভাই মানুষ তো টানা ২/৪ দিন না খেলেও বেঁচে থাকেন। আপনি কি এইটা চান? অনেক মানুষ ৩ বেলার পরিবর্তে ২ বেলা খেয়ে আছে। তাছাড়া মাছ মাংসের এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ মাসের পর মাস মাছ-মাংস হতে দূরে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সকল পণ্যের দাম কমলেও আমাদের বাজারে সে তুলনায় কমেনি। এটি আওয়ামী লীগের একটা ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। আমাদের শাসনামলেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তবে তা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। খাসির মাংসের দাম হাজার ছাড়িয়েছে এবং গরুর মাংস প্রায় ৮০০ টাকা। যে টাকি মাছ আমরা সবসময় ১০০/১৫০ টাকা কেজি ক্রয় করেছি, তা এখন ৪০০ টাকা প্রায়। গরিব মানুষ সাধারণত পাঙ্গাস মাছ, তেলাপিয়া মাছ খেয়ে থাকতো, তার কেজি এখন ২০০ টাকার বেশি। চাষের কৈ মাছ আগে ছিলো ১৫০ টাকা কেজি, যা এখন ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বেশির ভাগ মানুষ বর্তমানে ইলিশ মাছ, গরুর মাংস কিনতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম না বাড়লেও আমাদের বাজারে এক কেজি আটার দাম বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা। আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে মানুষের সুখের কথা উল্লেখ করে থাকেন, তাতে মনে হয় এখনকার মানুষ শায়েস্তা খাঁনের আমলের চেয়েও সুখে আছে। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগেরই ৩০/৩৫ শতাংশ নেতাকর্মীরাই মাছ মাংস কিনতে পারছে না। কিছু দুর্নীতিবাজ নেতা ও ব্যবসায়ীরা বাজার হতে ব্যাগ ভর্তি মাছ মাংস ক্রয় করে নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, ভারত, ইন্দোনেশিয়া থেকে হজ্জ খরচ আড়াই লক্ষ টাকা হলেও বাংলাদেশ হতে এবার খরচ সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার উপরে। সীমিত আয়ের মানুষেরা ফার্মের মুরগির ওপর নির্ভর করলেও এখন তার দাম বেড়ে কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা। তাহলে জনগণ টিকবে কীভাবে? এসকল সিন্ডিকেটের সঙ্গে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ নেতারাই জড়িত।
সূত্র : একাত্তর টিভির ‘ সংবাদযোগ’ টকশো থেকে অনুলিখন করা হয়েছে।