চ্যাটজিপিটি সাইবার স্পেসকে কীভাবে হুমকির মুখে ফেলবে?
ফারিয়াহ আহসান রাশা
ইদানীং চারপাশে চ্যাটজিপিটির বেশ নামডাক শোনা যাচ্ছে। সারাবিশ্বে আলোড়ন তোলা চ্যাটজিপিটি জানুয়ারি মাসে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মাসিক ব্যবহারকারী ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালের শেষের দিকে চালু হওয়ার পর থেকে এটি দ্রæততম গ্রাহক বৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে।
চ্যাটজিপিটি আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন লিখিত কাজ যেমন সহজ করে দিয়েছে এবং সময় বাঁচাচ্ছে, ঠিক তেমনই আমাদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য চ্যাটজিপিটি খুব একটা নিরাপদও নয়। তাহলে চ্যাটজিপিটি সাইবার জগতে আমাদের জন্য ঠিক কীভাবে বিপদ ডেকে আনছে? চলুন জেনে নেয়া যাক।
চ্যাটজিপিটি কী? প্রথমেই চ্যাটজিপিটি সম্পর্কে একটু ধারণা দিয়ে শুরু করি। চ্যাটজিপিটি হচ্ছে একধরনের চ্যাটবট। ২০২২ সালের নভেম্বরে এটি চালু করা হয়। এটি ওপেনএআইয়ের জিপিটি ৩.৫ পরিবারের ব্রড ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের উপর তৈরি করা হয়েছে। ঈযধঃএচঞ এই সিস্টেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত। এই চ্যাটবট পুরোপুরি একজন মানুষের মতো যেকোনো ধরনের লেখা তৈরিতে সক্ষম। একে কোনো প্রশ্ন করা হলে চটজলদি সেই প্রশ্নের গঠনমূলক, বেশ সহজ এবং বোধগাম্য উত্তর তৈরি করে দিতে পারে, যা একে অন্যান্য চ্যাটবট থেকে আলাদা করে তুলেছে।
অ্যালেক্সার মতো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল সংগ্রহ করে এবং পুনরাবৃত্তি করার মাধ্যমে ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে। এই সহকারীরা এখনও ঘখচ এবং অন্যান্য অও প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি এদের থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে। এটি সার্চ ইঞ্জিনগুলোর তোয়াক্কা করে না। বরং এর পরিবর্তে মেশিন লার্নিং ডেটা থেকে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে বের করে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে।
অনেক সাইবারসিকিউরিটি বিশ্লেষক ভাবছেন এই সামান্য পার্থক্য কীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তাকে কাজে লাগাতে পারে। বিশ্লেষকরা যদি সাইবার হুমকির সোর্স সনাক্ত করতে ঈযধঃএচঞ ব্যবহার করতে পারে, হ্যাকাররাও হ্যাক করতে এই প্রোগ্রাম থেকে প্রাপ্ত ডাটা ব্যবহার করতে পারে। এই চ্যাটবটের চূড়ান্ত প্রভাব ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে, যা আসলেই এর ব্যবহারকারীর উপর নির্ভর করে।
যেভাবে সাইবার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে চ্যাটজিপিটি : পূর্বের তুলনায় আরও বেশি বাস্তবধর্মী ফিশিং মেইল লিখতে সাহায্য করবে। ব্যক্তি কিংবা অর্গানাইজেশন অনুযায়ী পার্সোনালাইজড ইমেইল তৈরি করতে পারবে। ফলে যাদের কাছে মেইল যাবে, তারা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি কোনো রকম সন্দেহ ছাড়াই শেয়ার করে ফেলতে পারে।
র্যানসমওয়ারে আক্রান্ত ভিক্টিমদের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করে টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে। ফলে হ্যাকারকে ধরা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
ম্যালওয়ার তৈরিতে সাহায্য করবে। যদিও একটি এক্সপেরিমেন্টের জন্য চ্যাটজিপিটিকে র্যানসমওয়ারের কোড বানাতে বললেও এটি তা তৈরিতে নাকচ করেছিল। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন যে, ভিন্নভাবে হলেও চ্যাটজিপিটি তা তৈরি করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে। সফটওয়্যার কোম্পানি সাইবারআর্ক সফলভাবে প্রোগ্রামটি ব্যবহার করে বাইপাস করতে এবং পলিমরফিক ম্যালওয়্যার তৈরি করতে পেরেছিল। তারা কোড পরিবর্তন করার জন্য ঈযধঃএচঞ-ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল এবং তা সনাক্ত করা কঠিন ছিল। এছাড়াও তারা এমন প্রোগ্রাম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল যা ম্যালওয়্যার এবং র্যানসমওয়ার আক্রমণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
শেষ কথা : নতুন প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনলেও অনেক সময় বয়ে আনে অভিশাপ। চ্যাটজিপিটি যেমন আমাদের জন্য আশীর্বাদ, ঠিক তেমনি অভিশাপও বটে যদি এটি ক্ষতিকর কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই সাইবার স্পেসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আমাদেরকেই, এবং ভালো কাজে চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করার মাধ্যমে তা সম্ভব। এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, চ্যাটজিপিটি একমাত্র অও ভাষার মডেল নয় যা এই সম্ভাব্য হুমকির মুখে ফেলতে পারে সাইবার স্পেসকে। বরং অন্যান্য ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে তৈরি এচঞ-৩ কিংবা সর্বশেষ সংযোজিত এচঞ-৪ একইভাবে সাইবার স্পেসের জন্য হুমকিস্বরূপ। সূত্র : রোর বাংলা