মতিনুজ্জামান মিটু : বস্তায় আদা চাষ করে এদেশের যে আদার ঘাটতি সহজেই পূরণ করা সম্ভব বলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জের মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশিকুল ইসলাম জানান।
তিনি জানান, আদা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। আগে এক সময় এদেশ থেকে আদা রপ্তানি হতো। কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যের সেইতিহাস এখন বাসী হয়ে গেছে। বর্তমানে এদেশের মোট ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৮৮ হাজার টন আদা উৎপাদিত হয়। যা দেশের চাহিদার ৪.৮১ লাখ টনের তুলনায় খুবই নগন্য। জমি স্বল্পতা ও কন্দ পঁচা রোগসহ নানা কারণে দেশে আদার ফলন ক্রমান্বয়ে কমছে। এসময় পাহাড়ী তিন জেলা, মধুপুর, লালমনির হাট, নিলফামারিসহ দেশের খুবই কম জমিতে আদার আবাদ করা হচ্ছে। এদেশে আদার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১১.২৮ টন। এদিকে ঘাটতি পুরণে বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা বারি আদা-১, বারি আদা-২, ও বারি আদা-৩ নামে তিনটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার ফলন হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৯ টন। কন্দ পঁচা রোগের কারণে আদার ফলন শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত কম হয়ে যায়। প্রতি বছর এদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘরবাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা ব্যাপক হারে বাড়ছে। কমছে যাচ্ছে আবাদি জমি।
বাংলাদেশের বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য শুধু আবাদি জমির ওর নির্ভর করলে হবেনা। এপরিস্থিতিতে চাষ অযোগ্য পতিত জমি বা বসতবাড়ির চারদিকে অব্যবহৃত স্থান, লবনাক্ত এলাকা, খারীয় এলাকা, নতুন ফল বাগানের মধ্যে বিল্ডিং এর ছাদে, বস্তায় আদা চাষ করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। বস্তায় আদা চাষ করে বাংলাদেশে যে আদার ঘাটতি রয়েছে তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব।
বস্তায় আদা চাষের সুবিধা : যে কোনও পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়; একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়; এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ করে বস্তা প্রতি ১ থেকে ২ কেজি আদা উৎপাদন করা যায়; এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে কন্দ পঁচা রোগ হয় না। যদিও কখনো রোগ দেখা যায় তখন গাছসহ বস্তা সরিয়ে ফেলা যায়, ফলে কন্দপঁচা রোগ ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে না; বস্তায় আদা চাষ করলে নিড়ানীসহ অন্যান্য পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না ফলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। জৈব পদার্থ সম্পৃক্ত দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও উচু জায়গা বস্তায় আদা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।