![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
বতর্মান প্রেক্ষাপটে আরবিট্রেশন আইন ২০০১ সংষ্কারা কথা বললেন আইনমন্ত্রী
মো. আখতারুজ্জামান : আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রæততম সময়ে আইনী কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়। তিনি জানান, বর্তমান সরকার দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয় সংষ্কারে বদ্ধ পরিকর। আইনমন্ত্রী বলেন, বতর্মান প্রেক্ষাপটে আরবিট্রেশন আইন ২০০১ সংষ্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের আরো বেশি হারে এডিআর কার্যক্রম ব্যবহারের আহŸান জানিয়ে আইন মন্ত্রী বলেন, কার্যকর এডিআর ব্যবস্থাপনা বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। মেডিয়েন কনভেনশন স্বাক্ষরিত হবে এবং সিপিসি অ্যাক্ট ইতোমধ্যে সংষ্কার করা হয়েছে। আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্নে নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার আরো বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধির ধারাকে আরো বেগবান করার পাশাপাশি বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে আমাদের একটি কার্যকর আইনি কাঠামো প্রয়োজন, যা বিশেষকরে ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দ্রæত ও দক্ষ কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট বাস্তবায়ন সক্ষম। আমাদের বর্তমান আইনি কাঠামোতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রথম ধাপেই বিদ্যমান বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের প্রয়োজনীয় সংষ্কার একান্ত অপরিহার্য। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত কয়েক দশকে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বাণিজ্য বিরোধের পরিমাণ। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতেআরবিট্রেশন একটি অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ক্রস-বর্ডার সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য বিরোধগুলো দ্রæত ও স্বল্প খরচে সমাধানে প্রচলিত আইনি ব্যবস্থার চেয়ে আরবিট্রেশন ব্যবস্থাকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি মাত্রায় কার্যকর বলে মনে করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, বিগত দুইদশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, তবে আগামী ৩ বছর পর দেশটির এলডিসি হতে উত্তোরণ পরবর্তী সময়েঅধিকতর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষনের লক্ষ্যে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংষ্কার একান্ত অপরিহার্য। এটা সত্য যে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং এডিআরের মাধ্যমে দ্রততম সময়ে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে করতে চায়। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল আইনের সংষ্কার খুবই জরুরী এবং এক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ বিবেচায় নিয়ে দ্রæততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংষ্কার সম্পন্ন করা আবশ্যক বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে এনফোরসেমেন্ট অব কনট্রাকের বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে হাইকমিশনার মত প্রকাশ করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেনবাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদি। তিনি বলেন, আরবিট্রাল ট্রাইবুনালের কোর্টের ন্যায় ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১-এর সংজ্ঞায় কোর্টকে ইন্টারন্যাশনাল কমার্শিয়াল আরবিট্রেশনের আদলে যেন হাইকোর্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি তিনি স্ট্যাম্প-এর শুল্ক প্রদানের সকল প্রক্রিয়া ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে আরবিট্রেশন মামলার কার্যক্রমের একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজ তৈরির প্রস্তাব করেন। ব্যারিস্টার হাদি আরো বলেন, বিদেশী নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের আরবিট্রেশনের জন্য বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিদ্যমান বাণিজ্য বিরোধ সমূহ দ্রæততর সময়ে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তিনি একটি আন্তর্জাতিক কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ-এর সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আকতার, গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এবং ভারতের সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবি প্রমোদ নায়ার অংশগ্রহণ করেন। জাভেদ আকতার ডিজিটাল ম্যাকানিজম ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্মার্ট আরবিট্রেশন প্রক্রিয়া চালুকরণের উপর জোরারোপ করেন, সেই সাথে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে আরবিট্রেশন বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।
ইয়াসির আজমান বলেন, আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, তবে এটার প্রয়োজনীয় সংষ্কার জরুরী। পাশাপাশি তিনি এ আইনের দ্রæত বাস্তবায়নে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রস্তাব করেন। প্রমোদ নায়ার বলেন, ভারতে আরবিট্রেশন আইনের প্রয়োজনীয় সংষ্কারের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালন সূচকে দেশটির অবস্থানের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মত। তিনি জানান, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভারতে পৃথক ভাবে কমার্শিয়াল কোর্ট পরিচালিত হয় এবং এ ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সময়সীমা ও ফি সুনিদিষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরোও জানান, ভারতে এডিআর কার্যক্রম আনলাইনে পরিচালিত হয়ে থাকে, যেটি খরচ হ্রাস ও সময় বাঁচাতে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)