করর্পোরেট কোম্পানিগুলো ১৫ থেকে ৮০ শতাংশ কর ফাঁকি দেয়: সিপিডি দেশের মোট জিডিপির ৩১ শতাংশ কালো টাকা
বিশ্বজিৎ দত্ত : কর ব্যবস্থার বাইরে দেশে ইনফরমাল অর্থনীতির পরিমাণ প্রায় ৮৪২০০ কোটি টাকার। এরমধ্যে কালো টাকাও রয়েছে। এই হিসাবটি গতকাল দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগও ক্রিস্টিয়ান এইড। তাদের মতে ২০১০ সালে ইনফরমাল অর্থনীতি ছিল মোট করের ৩৬ শতাংশ। ২০২১ সালে এটি কমে ৩০.২ শতাংশ হয়েছে। তবে এই সময়ে কালো টাকার পরিমান ৪গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইনফরমাল অর্থনীতির মোট পরিমাণ ২২০০০ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৪২০০ কোটি টাকা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সাধারণভাবে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কর প্রদানের বিষয়টি স্বচ্ছ। তাদের অডিট রিপোর্ট বা ট্যাক্সের ফাইলে কোন ধরণের অসঙ্গতি নেই। এই অবস্থায় বিভিন্ন কর বিশেষজ্ঞ ও চাটার্ড একাউন্টেন্ট তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে বিষয়টি আমরা পেয়েছি তা হলো কর্পোরেট করদাতারা বিপুল কর ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই ফাঁকির পরিমান ক্ষেত্র বিশেষ ১৫ থেকে ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশের কর কাঠামোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিন নিয়েছেন এমন করদাতার সংখ্যা ২.৫ মিলিয়ন। কিন্তু বাংলাদেশে কর দিতে সক্ষম করদাতার সংখ্যা রয়েছে ১৬৫ মিলিয়ন।
আড়াই লাখ রেজিস্টার কোম্পানির মধ্যে কর প্রদান করছে ৩০ হাজার কোম্পানি। সিপিডির জরিপের তথ্য অনুযায়ি ৬৮ ভাগ করদাতা কর প্রদান করেন না। আবার কোম্পানি মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর প্রদান করে আসছে ব্যাংক, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ট্যাবাকো উৎপাদনকারীরা। দেশে অনেক শিল্প রয়েছে যারা বছরের পর বছর সরকারের কাছ থেকে কর অব্যাহতি নিয়ে যাচ্ছেন। এনবিআরের কাছে কোন তথ্য নেই এসব কোম্পানিকে কেন এতদিন কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে করপোরেট করের ক্ষেত্রে একটি অস্বচ্ছতা রয়েছে। আবার কালোটাকাকে বিশেষ সুবিধায় সাদা করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমেও দেশের করপ্রদানের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার সৃষ্টি হয়েছে। এই অসচ্ছতার পরিমাণ ৮৪ হাজার কোটি টাকা।
সিপিডি উল্লেখ করে বাজেটে বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তায় যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। শুধুমাত্র ইনফরমাল অর্থনীতিকে ট্যাক্সনেটের আওতায় নিয়ে আসা হলে ৮গুন বেশি সামাজিক নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব। এই নিরাপতার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যকাতের উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো। বাজেটের বর্তমান স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ রয়েছে তা আরো ১৩ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা যায়।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের পরেই রয়েছে। আফগানিস্তানে কর জিডিপির অনুপাত ৭.৬ শতাশ আর বাংলাদেশে ৯.১ শতাংশ। এই অবস্থায় আইএমএফ বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে কর জিডিপির অনুপাত ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেতে। এটি করতে চাইলে এখন প্রয়োজন হবে ২৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত কর আহরণের। কিন্তু বর্তমান কর কাঠামোতে এই পরিমাণ অর্থ আহরণ করা সম্ভব হবে না বলেই মনে হচ্ছে। তাই কোম্পানিগুলোর আয়করে আরো স্বচ্ছতা আনলে আইএমএফের শর্ত পুরন করা সম্ভব হবে।
ইনফরমাল অর্থনীতিকে করের আওতায় আনার জন্য সিপিডি বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছ্ েএগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে যে তারা আগামী বছরে কত পরিমান অর্থ কর ফাঁকি থেকে আহরণ করবেন। সকল প্রকার কর অব্যাহতি বাতিল করতে হবে। একটি ইন্টিগ্রেটেড আর্থিক লেনদেনের পদ্ধতিও কর ফাঁকির কমাতে পারে বলে মনে করে সিপিডি।