এডিপিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে নতুন প্রকল্প
এস.ইসলাম জয় : নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে চলমান প্রকল্পসমূহের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যতীত অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প ও মেগা প্রকল্পসহ বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলা হচ্ছে সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত না হলে সরকারি অর্থায়নে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যুক্ত করা যাবে না।
স¤প্রতি নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তৈরির ক্ষেত্রে নির্দেশনা জারি করেছে সংস্থাটি। সেখান এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার এবং কাঙ্খিত সুফল প্রাপ্তির জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে যেসব প্রকল্পের গতি ধীর সেগুলো থেকে টাকা কেটে নিয়ে দ্রæত গতির প্রকল্পে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে- খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছর এডিপিতে অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প,বিদ্যুৎ খাত, শ্রম-শক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য কমানোর সংক্রান্ত প্রকল্পে সবাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, ঘূর্ণিঝড়,জলোচ্ছ¡াস, বন্যা,অতিবৃষ্টি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি পূর্নবাসন সংক্রান্ত প্রকল্পেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, এডিপি বা সংশোধিত এডিপির জন্য যে নীতিমালা জারি করা হয় সেগুলো মানার বাধ্যবাধকতা আছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রায় ৩০-৩৫টির মতো নির্দেশনা মেনেই এডিপির জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায়। পরিকল্পনা কমিশন অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে কিংবা অন্যান্য প্রকল্প যুক্ত করার ক্ষেত্রে নীতিমালা ধরে ধরেই পরীক্ষা করে। এগুলো না মানলে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় না। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলমান ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে বিদেশি ঋণ বা অনুদান আছে এমন প্রকল্প গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট (চুক্তি স্বাক্ষরিত/সহায়তা প্রাপ্তির সুনিশ্চিত অঙ্গীকারপ্রাপ্ত) প্রকল্পে ম্যাচিং ফান্ড বরাদ্দের প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক অর্থায়ন রয়েছে এমন নতুন প্রকল্পেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আরও বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারণ প্রকল্পে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। এডিপিতে অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়ক প্রকল্প (লিংক প্রজেক্ট) গুরুত্ব দিতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) প্রাইস কন্টিনজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে সংস্থান করা অর্থের ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপি তৈরিতে নানা ক্ষেত্রে সতর্কতা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জনগণের জীবনমান অধিক উন্নয়নে জন্য যেসব সরকারি পরিকল্পনা আছে সেগুলোকে মেনে চলতে হবে। যেমন-প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২৫) এবং বন্দীপ পরিকল্পনা-২১০০ এসবের সঙ্গে মিল রেখে প্রকল্প প্রস্তাব করতে হবে।
আগামী অর্থবছরের এডিপি তৈরির ক্ষেত্রে খাত ভিত্তিক বরাদ্দ বিভাজন, অনুমোদিত প্রকল্প, বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প এবং নিজস্ব অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প এডিপিতে অন্তভর্‚ক্তির ক্ষেত্রে এসব পরিকল্পনার সঙ্গতি রাখতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন আরও বলেছে, যেসব বিনিয়োগ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছে সেসব প্রকল্প কেবল নতুন অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় দিতে হবে। এছাড়া বিনিয়োগ ও কারিগরি প্রকল্পের মতো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ করতে হলে এডিপিতে নতুন অননুমোদিত বরাদ্দহীন প্রকল্পের তালিকায় অর্ন্তভ‚ক্ত হতে হবে। ভবিষ্যতে গ্রহণ করা হবে এমন প্রকল্প দেওয়া ঠিক হবে না।