১৮ এপ্রিল থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেসে যুক্ত হচ্ছে নতুন কোচ
রহিদুল খান : বেনাপোল এক্সপ্রেস চালুর প্রায় চার বছর পর পুরাতন কোচ পরিবর্তন করে নতুন কোচ যুক্ত হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে কোচ ও আসন সংখ্যা। বেড়েছে অন্যান্য সুবিধাও। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহীর জেনারেল ম্যানেজারের (পশ্চিম) পক্ষে সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পি) (পশ্চিম) আব্দুল আওয়াল ৬ এপ্রিল বেনাপোল-ঢাকা রুটে নতুন কোচ চালু সংক্রান্তে একটি অফিস আদেশ দিয়েছেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে, সদ্য আমদানি করা চায়নিজ কোচ দ্বারা ৭৯৫/৭৯৬ নম্বর আন্তঃনগর বেনাপোল এক্সপ্রেসের রেক (একটি ট্রেনের সকল কোচকে একসাথে রেক বলে) প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চলাচল ও পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হলো। এই ট্রেনটি আগামী ১৮ এপ্রিল বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোলের স্টেশন মাস্টার সাঈদুর রহমান।
তিনি জানান, বর্তমানে বেনাপোল এক্সপ্রেসে কোচ রয়েছে আটটি। নতুন রেকে চারটি বৃদ্ধি করে কোচ সংখ্যা ১২টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৮ সিটের একটি এসি কোচ, একশ’ ৬০ সিটের দুটি এসি চেয়ার/স্নিগ্ধা কোচ এবং সাতশ’ ৭৬ আসন বিশিষ্ট নয়টি শোভন চেয়ার কোচ থাকবে। ট্রেনটিতে মোট আসন থাকছে আটশ’ ৮৪টি। যা বর্তমানে চলা ট্রেনের মোট আসনের থেকে একশ’ একটি বেশি। এছাড়া, নতুন ট্রেনটিতে একটি নামাজের স্থান এবং সামনে ও পেছনের দিকে দুটি খাবার স্থান থাকবে। যা বর্তমানে চলা ট্রেনটিতে নেই। সাঈদুর রহমান বলেন, বর্তমানে বেনাপোল এক্সপ্রেসে নামাজের স্থান ও খাবার স্থান না থাকা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তুষ্ঠি রয়েছে। নতুন ট্রেনে এদু’টির ব্যবস্থা থাকায় যাত্রীরা খুশি হবেন। তিনি জানান, নতুন ট্রেনে যাত্রীরা আরামদায়ক ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে, টিকিটের মূল্য বাড়ানো বা কমানো হবে না। বর্তমান সূচি অনুযায়ীই নতুন ট্রেনটি চলবে।
যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল থেকে ঢাকা রুটে ট্রেন সার্ভিস চালু হয় ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই। সেদিন ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থেকে ঐতিহাসিক এই ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা নতুন কোচ নিয়ে শুরু হয়েছিল বেনাপোল এক্সপ্রেসের। কিন্ত, পরবর্তীতে তা উঠিয়ে এখানে দেয়া হয় ভারত থেকে আমদানি করা পুরাতন কোচ। যা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তুষ্ঠি তৈরি হয়। বেনাপোলসহ যশোরের মানুষ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে পুরাতন কোচ উঠিয়ে নতুন কোচ দেয়ার দাবি করা হয়। চলে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানও। এর মধ্যেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেনাপোল এক্সপ্রেসে নতুন কোচ সংযুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার স¤প্রতি পদ্মাসেতু লিংকেজের জন্য চায়না থেকে উন্নত মানের একশ’ ৫০টি নতুন রেক আমদানি করেছে। তারমধ্যে একটি বেনাপোল এক্সপ্রেসে দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যশোর পর্যন্ত পুরোমাত্রায় ট্রেন চলাচল শুরু হলে বেনাপোল এক্সপ্রেস তখন পদ্মাসেতু হয়ে যাতায়াত করবে। বর্তমান রুট চালু রেখে তখন সেখানে অন্য ট্রেন যুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, আমাদের অনেক আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হলো বেনাপোল এক্সপ্রেসে নতুন রেক স্থাপন।’
তিনি বলেন, এই রুটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভারতে যাতায়াত করে। বেনাপোল এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় মানুষের ভ্রমণক্লান্তি অনেক কমে আসে। কিন্তু, রেল প্রশাসন শুরুর দিককার ট্রেনের উন্নতমানের রেক সরিয়ে সেখানে পুরাতন রেক দেয়ায় সেবার মান কমে যায়। এ নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। অবশেষে নতুন রেক আসায় স্বস্তি ফিরে আসলো।