বাজেটে থোক বরাদ্দের কোন প্রস্তাব দিতে পারবে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
সোহেল রহমান : মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতাভুক্ত সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন এবং একই সঙ্গে আগামী ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণে সাধারণভাবে বাজেটে কোন প্রকার থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করতে পারবে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয়, তেমন সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
অতি সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত বাজেট পরিপত্র-২-এ একথা বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক প্রণীত বাজেট কাঠামো ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনুষ্ঠিত ত্রি-পক্ষীয় সভায় পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং ওই সভার পর্যবেক্ষণের আলোকে একটি সম্মত বাজেট কাঠামো প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতিতে বাজেট প্রণয়নের দ্বিতীয় পর্যায়ে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ত্রি-পক্ষীয় সভায় সম্মত রাজস্ব ও প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং ব্যয়সীমার আলোকে বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রয়োজনে সংশোধন ও পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। সংশোধিত বাজেট প্রস্তাব আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে আইবাস++ এ অন্তর্ভূক্তি সম্পন্নকরণ এবং হার্ডকপি অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ (১ ও ২), পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাক্কলন এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি’ কর্তৃক অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে সংকুলানযোগ্য হয়। ত্রি-পক্ষীয় সভায় আলোচনার ভিত্তিতে যে ব্যয়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, ওই ব্যয়সীমা সর্বোচ্চ বরাদ্দ এবং এ বরাদ্দ বৃদ্ধির কোন অবকাশ থাকবে না।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিস্তারিত বাজেট প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে চারটি নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ প্রথমত: মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোতে বর্ণিত কৌশলগত উদ্দেশ্য এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২০২৫), দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) ও মন্ত্রণালয়/বিভাগের নিজস্ব নীতিমালায় অন্তর্ভূক্ত সরকারের নীতি ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা এবং মধ্যমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে সক্ষম হয়।
দ্বিতীয়ত: বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারের মৌলিক নীতি নির্ধারণী দলিলগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দারিদ্র নিরসন সহায়ক বরাদ্দ বাড়াতে সক্ষম হয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রদেয় সেবার মান ও পরিমাণ বাড়ে।
তৃতীয়ত: জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ব্যয় বাড়ার সামঞ্জস্য রাখা, যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়।
চতুর্থত: মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
উন্নয়ন ব্যয়ের প্রাক্কলন/প্রক্ষেপণের ক্ষেত্রে ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ’ কর্তৃক আগামী তিন বছরের জন্য বৈদেশিক সহায়তার যে প্রক্ষেপণ প্রনয়ণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রকল্প সাহায্য ও পুনর্ভরণযোগ্য প্রকল্প সাহায্যের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রাক্কলন/প্রক্ষেপন প্রণয়নে ত্রি-পক্ষীয় সভায় নির্ধারিত মানদন্ডের ভিত্তিতে প্রকল্পওয়ারি বরাদ্দ পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পুনর্নির্ধারণ করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত মোট এডিপি ব্যয়সীমা কোনভাবেই অতিক্রম করা যাবে না। প্রদত্ত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য (ডিপিএ/আরপিএ), নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি বাবদ ব্যয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্প সাহায্য, নগদ বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি ব্যয় বিবেচনা করে প্রকল্পের প্রাক্কলন/প্রক্ষেপণ তৈরি করতে হবে। এ বাবদ ব্যয়সীমার অতিরিক্ত কোন অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হবে না।
সরকারি অনুদানে পরিচালিত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বরাদ্দ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চলতি অর্থবছরের নিজস্ব আয় ও আয়ের উৎসসমূহ পর্যালোচনা করতে হবে। ত্রি-পক্ষীয় সভায় সম্মত প্রাক্কলিত ও প্রক্ষেপিত আয় সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে দেখাতে হবে। নিজস্ব আয়ের অর্থ বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য ব্যয়সীমা/সরকারি অনুদানের পরিমাণ নির্ধারণ করে তার ভিত্তিতেই বিস্তারিত অর্থনৈতিক কোড অনুযায়ী বাজেট প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ প্রণয়ন করতে হবে।