মো. আখতারুজ্জামান : আমার বাবা মরণোত্তর দেহ দানের কথা সবসময়ই বলেছেন। কিন্তু এমন কাউকে পাওয়া যায়নি যিনি তার মরদেহে ছুরি চালাতে পারবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামাজে জানাজার সময় তার ছেলে বারীষ চৌধুরী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাবার ইচ্ছে ছিল তার মরদেহ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাজে দান করা হবে। আমরা তার সন্তান হিসেবে, পরিবার হিসেবে তার এই আশা পূরণের চেষ্টা করেছি। আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ, যেখানে উনি পড়েছিলেন এবং গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ, যে প্রতিষ্ঠান তিনি নিজে গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে দান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেটা হয়েছে, আমরা দুই জায়গা থেকেই একই রকম ফিডব্যাক পেয়েছি। দুটো প্রতিষ্ঠানেই কেউ নাই, যে আমার বাবার লাশে ছুরি লাগাতে পারবে!
বারীষ চৌধুরী বলেন, আর তাকে সম্মান করেই এই জিনিসটা বলা হয়েছে। বাবার সারাজীবনের ইচ্ছে ছিল এটা। কিন্তু যখন এই সম্মান আর ভালোবাসা নিয়ে কথাটা বলা হয়েছে, তখন আমরা আসলে আর কিছু বলতে পারিনি। তাই আমরা তাকে শুক্রবার সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সমাহিত করার কথা ভেবেছি।
তিনি বলেন, আমার বাবা যদি কারও কাছে ঋণী হয়ে থাকেন তো তিনি আমাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও আমার বাবার যুদ্ধ শেষ হয়নি। তিনি তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করেছেন। কারণ, তার কাছে সবচেয়ে বড় ছিল দেশ ও দেশের মানুষ। আমরা চাচ্ছি, সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যেখানে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল গড়েছেন, যেখানে এত বছর ধরে কাজ করেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য, স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য কাজ করেছেন, সেখানে তাকে আমরা দাফন করবো।
মঙ্গলবার রাত ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।