সরকারের নতুন প্রবৃদ্ধির হিসাব আসলে জীবনের সঙ্গে মিলছে না
বিডি রহমতউল্লা:সরকার বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও পার ক্যাপিটা আয়ের নোতুন হিসেব দিয়েছে । নোতুন হিসেবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ৭.০৫% ও পার ক্যাপিটা আয় বাড়িয়ে বলা হচ্ছে ইউ.এস.$ ১৪৬৬, সম্ভবত: !! বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদেরা এ হিসেব বিশ্বাসতো করছেনই না এবং সঙ্গত কারনে মানছেনও না । সরকারের এ হিসেবের রহস্যের গোমরটাও তাঁরা বিভিন্নভাবে ফাঁস করে দিয়েছেন । আসলে হিসেবের খাতায় আমরা তর তর করে উপরে উঠে যাচ্ছি । মূল কথা হলো যাদের সঙ্গে আমরা নিত্যদিন চলি তাদের কি অবস্থা সেটা পরখ করলেইতো সব ল্যাঠা চুকে যায় ! প্রবৃদ্ধি বা পার ক্যাপিটা আয় বাড়াতে কি আমাদের গ্রামের রহিম, গফুর আর নগেনের কোন লাভ হয়েছে ? কিংবা ঢাকার বস্তিতে থাকা ছালেহা , রোকেয়ার অবস্থার কি কোন হেরফের হয়েছে ? আরো একটু উপরের শ্রেণীতে খোঁজ নিলেও কি আমরা দেখতে পাবো আসমা কিংবা জাহিদেরা ৩ বেলাই পেট ভরে খেতে পেরেছে, অসুখ-বিসুখে ভালো ডাক্তার দেখাতে পেরেছে, সন্তানদের নিশ্চিন্তে লেখাপড়া করাতে পারছে !! লুটেরা অর্থনীতি আর লুটেরা হিসেবের এই হলো হাল ! এদের সেই আগের হালই চলছে । নুন আনতে পান্তা ফুরোয় আর কি!!
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাভাবিক কারণেই অনেক উচ্চাশা আর আকাঙ্ক্ষা নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল গন মানুষেরা ! তবে শোষনমূলক উন্নয়ন কৌশলের কারণে সা¤প্রতিক দশকগুলোয় সামাজিক অসমতা, দূর্ণীতি ও বৈষম্য যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে পাকিস্তান আমলের অর্থনীতিরই যেন পুনরুজ্জীবন ঘটছে। সমাজের বিরাট এক অংশ এখনো ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে ঘুমাতে যায়। মানসম্মত শিক্ষা, চিকিৎসা ও পরিবেশসম্মত আবাসন সুবিধা এখনো সাধারণের আয়ত্তের বাইরে। সমাজের ৭৫ শতাংশ মানুষের জীবনে অসচ্ছলতা ও অস্বাচ্ছন্দ্যের প্রমাণ সর্বত্র । জীবনমুখী ও জনবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নতত্তে¡ না থাকায় অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় তার প্রতিফলন স্পষ্টতই দৃশ্যমান । আর লুটেরা অর্থনীতিতে এটাই স্বাভাবিক । দেশের উন্নয়নতত্তে¡র প্রধান কৌশল হচ্ছে জাতীয় আয় বৃদ্ধির নামে লুটেরা ধনীদের শোষন ও লুট করার সুযোগ করে দেয়া, দরিদ্রদের কথা অথবা বণ্টনব্যবস্থা থাকে সম্পূর্ণ অবহেলিত। ফলে জাতীয় আয় বাড়ার প্রধান সুবিধাভোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে একেবারে সীমিত বলা যায় লাখখানেক মানুষ, আর বিরাট অংশ বলতে গেলে প্রায় ১৬ কোটি মানুষই সাংঘাতিকভাবে নিগৃহীত,অবহেলিত,দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত !!
উন্নয়ন সাফল্যে দারিদ্র্যর হার কমার কথা বলা হলেও উল্টো ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমাজের একটি অংশ বড় অঙ্কের কালো টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। রাজনৈতিক আনুক‚ল্যে কিছু লোক রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ায় সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সত্যিকারের উদ্যোগী লোকেরা হতদমিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ওয়েলফেয়ার মনিটরিং সার্ভে অনুযায়ী, মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশের হাতেই সম্পদের সবচেয়ে বড় অংশ। মধ্যবিত্ত শ্রেণী মোট জনসংখ্যার ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। এর বাইরে ৭৫ শতাংশ মানুষই উন্নয়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বহুকষ্টে আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে দিন পার করছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার মানুষ। আর দারিদ্র্য নিত্যসঙ্গী এমন মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার। দারিদ্র্যর কশাঘাতে জর্জরিতের সংখ্যা প্রায় ১.৫ কোটি। অর্থ্যাৎ ১২ কোটি মানুষের এই হলো হাল !! এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ খাদ্যচাহিদা মেটাতে হয়ে পড়ছে ঋণগ্রস্ত। সমাজের এ অংশটি ক্রমেই ঋণভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।