চতুর্থ দফায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বাড়লো
সোহেল রহমান : পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় আরও ২ হাজার ৪১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে বর্ধিত ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়লো চতুর্থবার। একই সঙ্গে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার কারণ হিসাবে মূল সেতু ও নদীশাসন কাজের জন্য নিয়োজিত পরামর্শক ব্যয় বৃদ্ধিসহ ১৪টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। গত বছর ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী মূল সেতু উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনের পর সেতু জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। অবশিষ্ট আনুষঙ্গিক কাজ এবং ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধসহ অন্যান্য কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৭ সালের জুলাইয়ে মূল প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়ছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা; ২য় সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; বিশেষ সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ ৩য় সংশোধিত প্রস্তাবে প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল প্রস্তাবের তুলনায় সর্বশেষ সংশোধিত প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিনগুন।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প ব্যয় বাড়ার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ মূল সেতু ও নদীশাসন কাজের ঠিকাদার কর্তৃক অনিষ্পন্নকৃত দাবি বাবদ অর্থের সংস্থান; মূল সেতুর পাইলের ডিজাইন পরিবর্তন; ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন টাওয়ারের ফাউন্ডেশন প্লাটফর্ম নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়; মাওয়া প্রান্তে নদীর গভীরে সৃষ্ট গর্ত ভরাটকাজ; কাঁঠালবাড়ী থেকে বাংলাবাজার ফেরীঘাট স্থানান্তর করতে ব্যয়; মাওয়া নদীশাসন কাজের ডিজাইন পরিবর্তন; জিও ব্যাগের সাইজ পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বৃদ্ধি; মাঝিকান্দি থেকে শিমুলিয়া পর্যন্ত বিআইডবিøউটিএ ফেরি চ্যানেল ড্রেজিং, ক্লোজার ড্যাম, সার্ভে ভ্যাসেল ক্রয়; বৈদেশিক মুদ্রার মান উঠা-নামা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় ভ্যাট ও আয়কর এর হার বৃদ্ধি ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো পদ্মা নদীর উপর ৯.৮৩ কিলোমিটার (মূল সেতু ৬.১৫ কি:মি + ভায়াডাক্ট ৩.৬৮ কি:মি) দৈর্ঘ্য এবং ২২.১০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ। প্রকল্প এলাকার মধ্যে রয়েছেÑ মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার লৌহজং, শ্রীনগর, জাজিরা ও শিবচর উপজেলা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ৯.৮৩ কিলোমিটার মূল সেতু (সড়ক ও রেল ভায়াডাক্টসহ); ১৬.২২ কিলোমিটার নদীশাসন (নদীশাসনের অন্যান্য কাজসহ); ১২.১২ কিলোমিটার জাজিরা সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ ইন্ড ফেসিলেটিজ; মাওয়া সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ ইন্ড ফেসিলেটিজ; সার্ভিস এরিয়া-২; পুনর্বাসন; ২,৬৯৩.২১ হেক্টর ভ‚মি অধিগ্রহণ (অতিরিক্ত ভ‚মি ও ব্যয় সহ); পরিবেশ এবং ১৪ হাজার ৩৫৩ জনমাস পরামর্শক ব্যয় ইত্যাদি।